দি ব্যাংকার ডেস্ক
প্রকাশ: ১৫:২০, ১ মে ২০২৫
গ্রামীন অর্থনীতি চাঙ্গা করা এবং খরচ কমিয়ে ব্যাংক পরিসেবা বাড়াতেই এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের প্রচার ও প্রসার বেড়ে চলেছে। এজেন্ট ব্যাংকে মূলত গ্রামীন জনগোষ্ঠীই আমানত রাখছেন। ২০১৪ সালে ব্যাংক এশিয়ার মাধ্যমে ছোট পরিসরে শুরু হওয়ার পরবর্তী বছরগুলোতে প্রত্যন্ত এলাকায় এজেন্ট ব্যাংকিং বেশ জনপ্রিয়তা পায়। যার মাধ্যমে গ্রাহক পায় সেবা, সৃষ্টি হয় কিছু কর্মসংস্থানও। কিন্তু নানা বাস্তবতায় সেই জনপ্রিয়তায় যেন ভাটা পড়তে শুরু করেছে। মূলত এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে ঋণ পাওয়ার জটিলতা, হ্যান্ডেলিংয়ে সমস্যা ও প্রযুক্তিগত দিকে অতিসতকর্তায় সৃষ্ট কড়াকড়ির কারণে গ্রাহক মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখাগুলো গ্রাহকবান্ধব হয়ে ওঠায় এখন মানুষ সরাসরি শাখাতেই সেবা নিতে যাচ্ছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ অনুসারে (২০২৪ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত), এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে অ্যাকাউন্টের সংখ্যা দুই কোটি ৩৬ লাখ ৯৭ হাজার ৭২৩টি। গত এক বছরে (২০২৪ এর অক্টোবর পর্যন্ত) অ্যাকাউন্টের সংখ্যা বেড়েছে ২৭ লাখ ৬৬ হাজার ২৫৮টি। এর আগের দুই বছরে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে অ্যাকাউন্ট বৃদ্ধির সংখ্যা সাড়ে ৩৮ লাখের ওপরে ছিল। অর্থাৎ গত বছর আগের দুই বছরের চেয়ে অ্যাকাউন্টের প্রবৃদ্ধি কমেছে ১১ লাখের মতো।
ব্যাংকের শাখা না থাকলেও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এখন দেশের মানুষ ব্যাংকিং সেবা পাচ্ছেন। পরিচালন ব্যয় কমাতে বর্তমানে ব্যাংকগুলো এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মতো বিকল্প সেবার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশে। এভাবে গ্রামীণ মানুষ আরও বেশি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হতে পারছেন। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠী এখন সহজেই ব্যাংকে টাকা জমা রাখতে পারছেন। প্রয়োজনে ঋণও মিলছে। রেমিট্যান্স সহজে পৌঁছে যাচ্ছে সুবিধাভোগীদের কাছে। এর মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা ছড়িয়ে পড়ছে গ্রামগঞ্জে। চাঙ্গা হচ্ছে প্রত্যন্ত এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্য। ফলে শক্তিশালী হচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতি।
দেশের বিরাট জনগোষ্ঠী এখনো ব্যাংকিং সেবার বাইরে। তাদের সেবার আওতায় আনতে এজেন্ট ব্যাংকিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এর মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। গ্রাহকরাও সহজেই এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারছেন এবং তাদের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছেন।
এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে হিসাব খোলা, টাকা জমা ও উত্তোলন, টাকা স্থানান্তর (দেশের ভেতর), রেমিট্যান্স উত্তোলন, বিভিন্ন মেয়াদি আমানত প্রকল্প চালু, ইউটিলিটি সার্ভিসের বিল পরিশোধ, বিভিন্ন প্রকার ঋণ উত্তোলন ও পরিশোধ এবং সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় সরকারি সব ধরনের ভর্তুকি নেওয়া যায়। এজেন্টরা কোনো চেকবই বা ব্যাংক কার্ড ইস্যু করতে পারে না। এজেন্টরা বৈদেশিক বাণিজ্য-সংক্রান্ত কোনো লেনদেনও করতে পারেন না। এ ছাড়া তাদের কাছ থেকে কোনো চেকও ভাঙানো যায় না। মোট লেনদেনের ওপর পাওয়া কমিশন থেকেই এজেন্টরা আয় করেন।
তবে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে আমানত রাখার প্রতি মানুষের আগ্রহ কমার পেছনে ব্যাংক শাখাগুলোর সেবার মান উন্নয়ন ও ঝামেলাহীন দ্রুত লেনদেন, নির্দিষ্ট সময়ে লেনদেনের পর ব্যাংক শাখা থেকে ঋণ পাওয়ার নিশ্চয়তা এবং উল্টোদিকে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে এ ধরনের সুবিধা না থাকা প্রদধান কারণ বলেই অনেকে মনে করেন। তাছাড়া এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকের মতে, এজেন্ট ব্যাংকিং খাতে অনেক এজেন্ট আমানতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারে না। এজেন্ট থেকে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়েই টাকা উত্তোলন করা যায়। আবার ডেবিট কার্ড সেবা থাকলেও গ্রামাঞ্চলে অনেকেই অ্যাপ বা এটিএম বুথের অভাবে চেকবইয়ের প্রতিই বেশি আগ্রহ দেখিয়ে থাকেন। তাচছাড়া মানুষের মধ্যে চেকবইয়ের প্রতি আস্থাই বেশি।
আবার অনেকের মতে, কোনো কোনো এজেন্ট আউটলেটের ওপর মানুষের আস্থার অভাব কম থাকায় গ্রাহক কমছে। তবে সব আউটলেটে তা কমেনি।