ঢাকা, শুক্রবার, ২২ আগস্ট ২০২৫

৬ ভাদ্র ১৪৩২, ২৭ সফর ১৪৪৭

চন্দনাইশ-পটিয়ার ‘কাঞ্চন পেয়ারা’ মৌসুমে বিক্রি ৬ কোটি টাকা

ব্যাংকার প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৯:১২, ১২ আগস্ট ২০২৫ | আপডেট: ০৯:১২, ১২ আগস্ট ২০২৫

চন্দনাইশ-পটিয়ার ‘কাঞ্চন পেয়ারা’ মৌসুমে বিক্রি ৬ কোটি টাকা

চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ ও পটিয়া উপজেলার বিস্তৃত পাহাড়ি এলাকায় উৎপাদিত কাঞ্চন পেয়ারা বাজারে আসতে শুরু করেছে। আগস্ট মাসের শুরু থেকে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় কাঞ্চন পেয়ারা বিক্রিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষীরা। এই পেয়ারা বদলে দিয়েছে কয়েক হাজার চাষির জীবন, ঘুচিয়েছে বেকারত্বের অভিশাপও। 

স্বাদ ও আকারের জন্য এ অঞ্চলের পেয়ারা বিখ্যাত উল্লেখ করে এই দুই উপজেলার কৃষি অফিস জানিয়েছে, চন্দনাইশ ও পটিয়ার প্রায় ৮৩০ হেক্টর পাহাড়ি জমিতে পেয়ারা চাষ হয়। প্রতি মৌসুমে কৃষকরা গড়ে ৬ কোটি টাকার বেশি পেয়ারা বিক্রি করেন।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কাঞ্চননগর ও আশপাশের গ্রামের কয়েকটি পাহাড়ের প্রায় ৭৫০ হেক্টর জায়গায় এবার চাষাবাদ হয়েছে পেয়ারা। পটিয়া উপজেলার শ্রীমাই, খরনা ও হাইদগাঁও-এর পাহাড়ি এলাকার প্রায় ৮০ হেক্টর জমিতে পেয়ারার চাষ হয়েছে।

স্থানীয় পেয়ারা চাষিরা জানান, কাঞ্চননগর ছাড়াও উপজেলার ধোপাছড়ি, হাশিমপুর, জঙ্গল হাশিমপুর, এলাহাবাদ, দোহাজারী, জঙ্গল জামিজুরীসহ বিভিন্ন পাহাড়ি অঞ্চলে প্রচুর উৎপাদন হয় এই পেয়ারা। প্রতি মৌসুমে চন্দনাইশের এসব পাহাড়ি অঞ্চলে প্রায় ২ হাজার বাগানে পেয়ারা চাষ করা হয়। কোনো প্রকার কীটনাশক ছাড়াই পেয়ারা চাষ হয় বলে এখানকার পেয়ারাকে অর্গানিক পেয়ারা হিসেবেও ধরে নেয়া যায়।

পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ, স্বাদেও অনন্য কাঞ্চন পেয়ারা। মিষ্টি লাগে, ভেতরে শক্ত বিচিও খুব কম। আকারেও আকর্ষণীয়। পাকলে ভেতরের অংশ সাদা, হলুদ কিংবা লালচে হয়ে ওঠে। বিশেষ এই জাতের পেয়ারার চাষবাস প্রথমে শুরু হয় চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার কাঞ্চননগর গ্রামে। এই পেয়ারা এ গ্রামকে দিয়েছে বিশেষ পরিচিতি; কাঞ্চননগর হয়ে উঠেছে ‘পেয়ারার গ্রাম’ আর ফলটি সুখ্যাতি পেয়েছে ‘কাঞ্চন পেয়ারা’ নামে। পেয়ারার এই চাষাবাদ এখন পাশের উপজেলা পটিয়ার শ্রীমাই, খরনা ও হাইদগাঁও এর পাহাড়ি অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে। 

স্থানীয় স্কুল শিক্ষক সুভাষ মল্লিক জানিয়েছেন, ‘মাটি ও পরিবেশের গুণে এই এলাকার পেয়ারা সুস্বাদু হয়। এই জাতের বীজ অন্য এলাকায় বপন করলেও এতো সুস্বাদু পেয়ারা পাওয়া যায় না। পাহাড়ি এলাকায় শত-শত বাগানে পেয়ারা চাষ হয়। বেশি বাগান চন্দনাইশে। পটিয়ায়ও এখন পেয়ারার চাষাবাদ ছড়িয়ে পড়েছে। কৃষকরা বাগানগুলোয় পেয়ারা ছাড়াও আম, কাঁঠাল, লিচু, লেবু ও অন্যান্য ফল চাষ করেন। তবে এলাকাটি সুস্বাদু পেয়ারার জন্য বিখ্যাত।

তিনি জানান, পেয়ারার মৌসুমে চন্দনাইশের কাঞ্চননগর, কাঞ্চননগর রেলস্টেশন, বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে, খানহাট, গাছবাড়ীয়া কলেজ গেইট, বাদামতল, রওশন হাট, বাগিচাহাট, দোহাজারী, পটিয়ার কমল মুন্সির হাট ও খরনা বাসস্ট্যান্ডসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পেয়ারার অস্থায়ী বাজার বসে। সেখানে পাইকারি ব্যবসায়ীরা আসেন।

উপজেলার প্রায় ৭৫০ হেক্টর পাহাড়ি জমিতে এবার পেয়ারার চাষ হয়েছে জানিয়ে চন্দনাইশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আজাদ হোসেন বলেন, ‘বিভিন্ন ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা নিয়মিত মাঠে যান। কৃষি অফিস সবসময় কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে থাকে। তারা কোনো সমস্যা নিয়ে এলে আমরা তা সমাধানের চেষ্টা করি।

তিনি মনে করেন, জ্যাম-জেলি উৎপাদনকারী ব্যবসায়ীরা যদি পেয়ারা চাষিদের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করেন, তাহলে কৃষকরা তাদের ন্যায্য মূল্য পাবেন। চন্দনাইশ ও পটিয়ায় যে পরিমাণ পেয়ারা উৎপাদন হয় তা প্রতি মৌসুমে বাজার মূল্য ৬ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায় বলে এই কৃষি কর্মকর্তা জানান।

পটিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কল্পনা রহমান বলেন, ‘উপজেলায় প্রায় ৮০ হেক্টর পাহাড়ি জমিতে পেয়ারার চাষ হয়েছে। চলতি বছর কাঞ্চন পেয়ারার ফলন ভালো হয়েছে। তবে অতিমাত্রায় টানা বৃষ্টিপাতের কারণে কিছু গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। এবার চাষিরা ভালো দাম পাচ্ছেন। পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় এখানে পেয়ারার ফলন ভালো হয়। চাহিদার কারণে চট্টগ্রাম অঞ্চলের বাইরে থেকেও অনেক ছোট-বড় ব্যবসায়ী পেয়ারা কিনতে ছুটে আসেন বলে তিনি জানান।’

চন্দনাইশের কৃষক জানে আলম বলেন, ‘প্রায় ৮ একর জমিতে পেয়ারা চাষ করেছি। জনপ্রতি ৫০০-৬০০ টাকা মজুরিতে ১০ শ্রমিক বাগানে কাজ করেন। একটি ঝুড়িতে প্রায় ২৫০টি পেয়ারা থাকে। চলতি মৌসুমের শুরুতে এক জোড়া পেয়ারার ঝুড়ি ২ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে প্রতিবার মৌসুমের মাঝামাঝি সময় থেকে দাম কমতে শুরু করে। 

কঠোর পরিশ্রম করে বাগানের পরিচর্যা করলে মৌসুমে একর প্রতি দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত লাভ করা যায় জানিয়ে কৃষক সগীর আহমেদ বলেন, আন্তরিকভাবে বাগানে কাজ করলে বিনিয়োগের তুলনায় দ্বিগুণ লাভ করা যায়।  পেয়ারা পচনশীল হওয়ায় আমরা ন্যায্য দাম পাচ্ছি না। বাগান থেকে সংগ্রহের পর পেয়ারা দ্রুত বিক্রি করতে হয়। এলাকায় পেয়ারা সংরক্ষণের জন্য হিমাগার প্রয়োজন।

পটিয়ার খরনা গ্রামের পেয়ারা চাষি রবিউল হোসেন বলেন, ‘এক সময় যেসব জমিতে জুমচাষ হতো বর্তমানে সেখানে সফলভাবে পেয়ারা চাষ হচ্ছে। এ পেয়ারার কদর রয়েছে প্রত্যন্ত এলাকায়। উপজেলা প্রশাসন একটি হিমাগার নির্মাণের কথা বলে এলেও সেটির কোনো অগ্রগতি নেই।’

নগরীর বহদ্দারহাটের ফল ব্যবসায়ী আবদুল হক বলেন, মৌসুমের শুরুতে আসা পেয়ারা একটু বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি ডজন পেয়ারা প্রকারভেদে বর্তমানে খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকায়। প্রতি মৌসুমে চন্দনাইশ ও পটিয়ার শত-শত বেকার যুবক পেয়ারার পুঁটলি নিয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের বিজিসি ট্রাস্ট, রওশনহাট, বাদামতল, খানহাট, গাছবাড়িয়া কলেজ গেইট, বাগিচাহাট, দেওয়ানহাট ও দোহাজারী পৌরসদর পর্যন্ত মহাসড়কের পাশে দাঁড়িয়ে বিক্রি করেন। সেখান থেকে আমরা পাইকারি কিনে এনে নগরের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে থাকি।

সূত্র: বাসস

এএ 

 

ব্যাংকার প্রতিবেদন

আরও পড়ুন