ঢাকা, বুধবার, ২১ মে ২০২৫

৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ২২ জ্বিলকদ ১৪৪৬

শিল্পে টানা গ্যাস সংকট, উৎপাদনে ভাটা

দি ব্যাংকার ডেস্ক

প্রকাশ: ১৪:১১, ৭ মে ২০২৫ | আপডেট: ১৪:১১, ৭ মে ২০২৫

শিল্পে টানা গ্যাস সংকট, উৎপাদনে ভাটা

কোলাজ : সমকাল অনলাইন

চাহিদার তুলনায় গ্যাস মিলছে ৪০ শতাংশ কম। কলকারখানার চাকা ঘুরছে ধুঁকে ধুঁকে। ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, আশুলিয়া, ভালুকাসহ দেশের সব শিল্পাঞ্চলেই অভিন্ন পরিস্থিতি। সবচেয়ে বিপদে পড়েছে দেশের বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাত। গ্যাসের অভাবে ঝুঁকিতে পড়েছে এ খাতের ৭০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ।

রাতে মিললেও দিনে গ্যাস যেন দুষ্প্রাপ্য। কাজ না থাকায় অনেক কারখানার শ্রমিক দিনে অলস সময় কাটাচ্ছেন। রাত থেকে ভোর এ সময়ে গ্যাসের চাপ বাড়লেই ঘোরে কারখানার চাকা। শ্রমিককে অতিরিক্ত মজুরি দিয়ে সে সময় কাজে নামানো হয়।

অনেক উদ্যোক্তা সিএনজি, এলপিজি বা ডিজেল দিয়ে উৎপাদন ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। বিকল্প জ্বালানি ও অতিরিক্ত মজুরির কারণে উৎপাদন খরচ হচ্ছে দ্বিগুণ। খরচ বেড়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কিছু কিছু কারখানা। গত আট মাসে শুধু নারায়ণগঞ্জেই ১৯ পোশাক কারখানা বন্ধ হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে রপ্তানি আয়েও। মার্চের চেয়ে এপ্রিলে রপ্তানি আয় কমেছে প্রায় ১২৩ কোটি ডলার। এর পরও আমদানিকারকদের অর্ডার সময়মতো পাঠানো যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন শিল্প মালিকরা। তারা বলছেন, সময়মতো পণ্য পাঠাতে না পারায় বাতিল হচ্ছে রপ্তানি আদেশ।

গ্যাস সংকটের এ পটভূমিতে আজ বুধবার শিল্প মালিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসছেন জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।

 

কমছে গ্যাস সরবরাহ

কয়েক বছর ধরে দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন কমছে। এলএনজি আমদানি করে ঘাটতি মেটানোর চেষ্টা করা হলেও ডলার সংকট, অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতার কারণে সংকট কাটছে না। দেশে এখন দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৩৮০ কোটি ঘনফুট। গতকাল মঙ্গলবার পেট্রোবাংলা সরবরাহ করেছে ২৭২ কোটি ঘনফুট গ্যাস। এর মধ্যে দেশীয় গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে পাওয়া গেছে ১৮৮ কোটি ঘনফুট।

 

 

এক বছর আগে ৫ মার্চ দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন ছিল ২০১ কোটি ঘনফুট। ২০২৩ সালের ৫ মে দেশীয় ক্ষেত্রগুলো থেকে উত্তোলন করা হয়েছে ২১২ কোটি ঘনফুট। ২০২১ সালের ৫ মে দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে পেট্রোবাংলা পেয়েছে ২৪৭ কোটি ঘনফুট, অর্থাৎ চার বছরে দেশীয় গ্যাস উৎপাদন কমেছে ৫৯ কোটি ঘনফুট। আমদানি করা এলএনজি থেকে দিনে গড়ে ৭৫ থেকে ৮০ কোটি ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যায়।

ভূতত্ত্ববিদ ড. বদরুল ইমাম বলেন, দেশে গ্যাস অনুসন্ধান এবং উত্তোলনে গুরুত্ব না দিয়ে এলএনজিনির্ভরতা বাড়ানো হয়েছে। তবে আর্থিক সংকটে চাহিদা অনুসারে এলএনজি আনতে পারছে না সরকার। ফলে ঘাটতি মেটানো যাচ্ছে না। আর অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতার কারণে দিনে ১১০ কোটি ঘনফুটের বেশি এলএনজি সরবরাহ করাও সম্ভব নয়।

 

পোশাক খাতে বড় ধাক্কা

নারায়ণগঞ্জ শহরের রহমান নিট গার্মেন্টের ডাইং সেকশনে গতকাল দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, গ্যাস সংকটে উৎপাদন বন্ধ থাকায় অধিকাংশ শ্রমিক অলস সময় কাটাচ্ছেন। শুধু একপাশ থেকে আসছে যান্ত্রিক শব্দ, সেখানকার শ্রমিকরা কর্মচঞ্চল।

প্রতিষ্ঠানটির উপমহাব্যবস্থাপক শিহাব উদ্দিন জানান, দুপুর ২টায় গ্যাসের চাপ সাধারণত ১০ পিএসআই থাকে। এখন আছে আড়াই পিএসআই। সকাল ৬টার দিকে ২ পিএসআই ছিল। চাহিদার চেয়ে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ গ্যাস কম পাচ্ছি। তিনি বলেন, ‘আমাদের দিনে উৎপাদন ক্ষমতা আট টন কাপড়। সেখানে গত দুই মাসে দিনে সর্বোচ্চ আড়াই টন কাপড় ডাইং করা যাচ্ছে। অতিরিক্ত কাজ করিয়েও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। গ্যাসের একই হাল ফতুল্লার ওসমান গার্মেন্ট, শাহ ফতেহ উল্লাহ গার্মেন্ট ও এম বি নিট ফ্যাশনেও।

 

আড়াইহাজারের লিটল গ্রুপের ভূলতা কারখানায় গত সোমবার সন্ধ্যায় গ্যাসের চাপ শূন্যে নেমেছিল। গ্যাসের অভাবে কারখানাটি বন্ধ হয়ে যায়। লিটল গ্রুপের চেয়ারম্যান এম খোরশেদ আলম জানান, ঈদে শ্রমিক মজুরি ও বোনাসের চাপ কীভাবে সামাল দেবেন, তা নিয়ে দু্শ্চিন্তায় আছেন। বিদ্যুৎ দিয়ে কাজ চালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি। তবে বিদ্যুৎ দিয়ে জেনারেটর বেশিক্ষণ চালালে দ্রুত নষ্ট হয়। গত জুনে তিনটি জেনারেটর নষ্ট হওয়ায় সাত কোটি টাকা খরচ করে নতুন কিনতে হয়েছে। ক্রমাগত ক্ষতির মুখে অনেক উদ্যোক্তা কারখানা বিক্রি করে দিতে চাচ্ছেন।

গ্যাস সংকটে গত আট মাসে নারায়ণগঞ্জে বন্ধ হয়েছে ১৯ পোশাক কারখানা। চাকরি হারিয়েছেন ১ হাজার ৫৭৩ জন। যেসব কারখানা সচল আছে, সেগুলোরও উৎপাদন কমেছে। কাঁচপুর বিসিক, মেঘনা অর্থনৈতিক অঞ্চল ও মেঘনা শিল্পাঞ্চল, চৈতি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কসহ বিভিন্ন এলাকার কয়েকশ কারখানার উৎপাদন নেমে এসেছে অর্ধেকে।

সোনারগাঁর টিপরদী এলাকার চৈতি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে গিয়ে জানা যায়, তাদের কারখানায় দুই বছর ধরে গ্যাস সংকট চলছে। তিতাস কর্তৃপক্ষকে সাতবার চিঠি দিয়েও কোনো সমাধান হয়নি। পার্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের ৫০ পিএসআই চাপের গ্যাসের অনুমোদন রয়েছে। সেখানে তারা পাচ্ছেন ২০-২৫ পিএসআই গ্যাস।

তিতাস গ্যাসের সোনারগাঁ জোনের উপমহাব্যবস্থাপক মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, সোনারগাঁয় যে চাহিদা, সেই পরিমাণ গ্যাস মিলছে না।

পোশাক খাতের অন্যতম প্রতিষ্ঠান নোমান গ্রুপের কারখানা ৩৬টি। গ্যাস সংকটে সব কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এতে বিপদে রয়েছে গ্রুপটি। বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএর কাছে সহায়তা চেয়ে গ্রুপের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। গত সপ্তাহে জ্বালানি উপদেষ্টার কাছে পাঠানো এক চিঠিতে বিটিএমএ নোমান গ্রুপের কথা উল্লেখ করে বলেছে, পর্যাপ্ত গ্যাস না পেয়ে নোমান গ্রুপের ২৮টি বস্ত্রকলে উৎপাদন প্রায় বন্ধ।

 

ওই চিঠিতে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, তিতাস শিল্প খাতে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে বিদ্যুৎ খাতে দিচ্ছে। গত ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে তিতাস গ্যাস প্রতিদিন শিল্প খাতে ১০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ কমিয়েছে। বিটিএমএ বলেছে, চাহিদা অনুযায়ী যদি দৈনিক ১২৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হতো, তাহলে শিল্প খাতের ন্যূনতম প্রয়োজন মেটানো সম্ভব হতো। বর্তমান গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে বস্ত্রকলগুলোর উৎপাদন আরও কমে একসময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আসছে ঈদে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধে সংকট তৈরি হওয়ার পাশাপাশি শ্রমিক অসন্তোষের শঙ্কাও রয়েছে বলে চিঠিতে সতর্ক করা হয়েছে।

 

গাজীপুরে উৎপাদন নেমেছে অর্ধেকে

গাজীপুরের মৌচাকের সাদমা ফ্যাশন ওয়্যার কারখানায় গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, গ্যাস সংকটে পাঁচ হাজার শ্রমিকের অধিকাংশই কর্মহীন। পরিচালক সোহেল রানা বলেন, গ্যাস সংকটে উৎপাদন অর্ধেকে নেমেছে। রাত ৯টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত কোনো রকমে কারখানা চলে। সকাল ৬টার পর গ্যাসের চাপ এতটাই কমে যে আর উৎপাদন সম্ভব হয় না। তিনি জানান, ৫৫ শতাংশ শ্রমিক অলস সময় পার করছেন। তারা প্রতিদিনই কারখানায় আসছেন, তবে কাজ করতে পারছেন না।

কালিয়াকৈরের খাড়াজোড়া এলাকার সামছুল আলামিন স্পিনিং মিলেও একই হাল। গ্যাস সংকটে ৪০টি যন্ত্রের সবগুলোই বন্ধ। ব্যবস্থাপক সারোয়ার আলম বলেন, আমাদের এ সুতা তৈরির কারখানায় ১০ পিএসআই গ্যাস পাওয়ার কথা। কয়েক মাস আগেও দেড় পিএসআই গ্যাস পেতাম। বর্তমানে গ্যাস নেই। তাই সব যন্ত্র বন্ধ রাখতে হচ্ছে।

গাজীপুরের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর সূত্র বলছে, জেলা ও মহানগরে আড়াই হাজারের কাছাকাছি শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। গ্যাস সংকটের কারণে এসব কারখানার উৎপাদন অর্ধেকে নেমেছে।

তিতাস গ্যাসের গাজীপুর জোনের ব্যবস্থাপক (অপারেশন) রিদওয়ানুজ্জামান বলেন, গাজীপুরে প্রতিদিন প্রায় ৫৯ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদার বিপরীতে মিলছে ৩৬ কোটি ঘনফুট।

 

সাভার-আশুলিয়াতেও সংকট

সাভার ও আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে ছোট-বড় মিলিয়ে কারখানা রয়েছে এক হাজার দুইশর বেশি। কয়েক মাস ধরে এসব কারখানায় তীব্র গ্যাস সংকট চলছে। বিকল্প হিসেবে ডিজেল ব্যবহার করায় উৎপাদন ব্যয় বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। বিদেশি ক্রেতারা পণ্যের দাম বাড়াচ্ছেন না। এতে আর্থিক ক্ষতির মুখে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনেক কারখানা।

আশুলিয়ার নরসিংহপুরে অবস্থিত নিউ এজ পোশাক কারখানার উপমহাব্যবস্থাপক বলেন, আমাদের কারখানায় গ্যাস প্রয়োজন কমপক্ষে ১০ পিএসআই। গ্যাস পাচ্ছি ১ থেকে ২ পিএসআই। এতে প্রতি মাসে ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকার ডিজেল কিনতে হচ্ছে।

সাভারের উলাইল এলাকার আল মুসলিম গ্রুপের পোশাক কারখানায় কাজ করেন প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক। কারখানাটির পরিচালক মোসলেম উদ্দিন জানান, ১ জানুয়ারি থেকে তাদের কারখানায় গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। গ্যাস-স্বল্পতার কারণে বয়লার চালু করা যায় না। ফলে শ্রমিকরা কাজে এলেও বসে থাকেন।

 

স্টিল মিল চলছে রাতে

ধুঁকছে স্টিল কারখানাও। দিনে গ্যাসের চাপ না থাকায় কারখানা চলছে রাতে। এতে খরচ বাড়ছে দেড় থেকে দুই গুণ। রহিমা ইস্পাত মিলের চেয়ারম্যান সাইফুর রহমান খোকন সমকালকে বলেন, গত বছরের জানুয়ারি থেকেই গ্যাস সংকট চলছে। গ্যাসের চাপ থাকার কথা ১৫ পিএসআই; থাকছে কখনও ৩, কখনও ৫ কিংবা ৭ পিএসআই। দিনে বেশি বেকায়দায় পড়তে হয়। তাই এখন রাতে কারখানা চালু রাখতে হচ্ছে। এতে শ্রমিকের মজুরি দিতে হচ্ছে দেড় গুণ। অন্যান্য খরচ বেড়েছে দুই গুণ। এভাবে চলতে থাকলে ঋণখেলাপি হয়ে পথে বসতে হবে।

 

ঢাকার কাঁচপুর ব্রিজ এলাকার বন্দর স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম বলেন, কারখানায় দুটি ফার্নেসচালিত বয়লার আছে। একটি চলছে, একটি বন্ধ রয়েছে। আবার যেটি চলছে, সেখানেও দেখা যায় উৎপাদন হচ্ছে ৪০ শতাংশ।

 

ধুঁকছে সিরামিকও

বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমইএ) সভাপতি ও মুন্নু সিরামিকের ভাইস চেয়ারম্যান মইনুল ইসলাম বলেন, এক বছরের বেশি সময় ধরে চলছে এ পরিস্থিতি। বিশেষ করে সাভার ও আশুলিয়া, গাজীপুর ও ময়মনসিংহের ভালুকা এলাকায় যেসব সিরামিক কারখানা আছে, সেগুলোর পরিস্থিতি খুবই খারাপ।

 

খাদ্যপণ্য

ভারী শিল্পের পাশাপাশি ব্যাহত হচ্ছে খাদ্য উৎপাদনও। প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের বাজারে প্রাণ-আরএফএল অন্যতম অংশীদার। গ্যাসের অভাবে গ্রুপটির উৎপাদন কমছে। গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী বলেন, উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে ডিজেল ব্যবহার করে উৎপাদন ধরে রাখতে হচ্ছে। এতে ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে।       

 

আসছে না নতুন শিল্প

গ্যাস সংকটে শিল্পে নতুন সংযোগ প্রায় বন্ধ। পুরোনো কারখানায় লোড বাড়ানোর অনুমতিও দেওয়া হচ্ছে না। শিল্পে গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকায় বিনিয়োগে স্থবিরতা নেমেছে। বাড়ছে না কর্মসংস্থান। বরং গ্যাস সংকটে চালু কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাড়ছে বেকারত্ব।

পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা যায়, লোড বাড়ানো ও নতুন সংযোগের জন্য প্রায় এক হাজার আবেদন জমা পড়েছে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোতে। এর মধ্যে অন্তত ৭০০ আবেদন নতুন সংযোগের। তিতাস গ্যাসেই নতুন গ্যাস সংযোগের ৬০০ আবেদন জমা আছে।

 

তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শাহনেওয়াজ পারভেজ বলেন, নতুন সংযোগের ব্যাপারে জ্বালানি বিভাগের নির্দেশনা মেনে কাজ করতে হচ্ছে। কয়েক মাসে নতুন সংযোগ তেমন দেওয়া না হলেও এখন শ্রেণিবিন্যাস করা হচ্ছে। অগ্রাধিকার অনুসারে সংযোগ দেওয়া হবে।

গত ৩০ এপ্রিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পরামর্শক কমিটির ৪৫তম সভায় মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল বলেছিলেন, কুমিল্লা অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৬০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেও দুই বছর ধরে গ্যাস ও বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা বিদেশিদের বিনিয়োগের জন্য ডাকছি। অথচ নিজের দেশের উদ্যোক্তারা জ্বালানি সংকটে ভুগছেন।

 

কারা কী বলছেন

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম সমকালকে বলেন, আমার ফিনিশিং সেকশনে মাত্র ৫০০ কেজির একটা ছোট বয়লার। সেটিও চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সারারাত অপেক্ষা করে সিএনজি পাম্প থেকে গ্যাস এনে বয়লার চালাতে হয়। যারা বড় বড় বয়লার চালান, তাদের কী অবস্থা?

তিনি জানান, সরকারকে শিল্প উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সংকট কাটাতে আপাতত এক জাহাজ এলএনজি আমদানি করে শিল্পে দেওয়া হোক। এ-সংক্রান্ত সব ব্যয় উদ্যোক্তারা বহন করবেন। এখনও সরকারের তরফ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।

জানতে চাইলে জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান গত সোমবার সমকালকে বলেন, গ্যাস নিয়ে শিল্প মালিকরা অভিযোগ করছেন। তারা বাড়তি দামেও গ্যাস পেতে মরিয়া। তাদের সঙ্গে বুধবার বসে কীভাবে সংকট মোকাবিলা করা যায়, আলোচনা করব। তিনি বলেন, উৎপাদন কম বলে চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ঘাটতি থাকছে। এটি কমানোর চেষ্টা চলছে।

 

[প্রতিবেদনটি দৈনিক সমকাল-এ ৭ মে ২০২৫ তারিখ প্রকাশিত হয়। দি ব্যাংকারে হুবহু প্রতিবেদনটি তুলে ধরা হলো]

 

/আআ

আরও পড়ুন