ঢাকা, শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫

৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

বেক্সিমকো টেক্সটাইল সচল করছে রিভাইভাল, পুনর্বহাল হবে ২৫ হাজার কর্মী

ব্যাংকার প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২০:৩৬, ১৬ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ২০:৫৪, ১৬ নভেম্বর ২০২৫

বেক্সিমকো টেক্সটাইল সচল করছে রিভাইভাল, পুনর্বহাল হবে ২৫ হাজার কর্মী

ঋণসংকটে বন্ধ থাকা বেক্সিমকো টেক্সটাইল আবারও চালু হতে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি লিজ নিয়ে চালুর উদ্যোগ নিয়েছে জাপান–বাংলাদেশি ইথিক্যাল ফ্যাশন ও সাসটেইনেবিলিটি ভেঞ্চার রিভাইভাল গ্রুপ কো. লিমিটেড এবং রিভাইভাল প্রজেক্টস লিমিটেড।

রোববার (১৬ নভেম্বর) রিভাইভালের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

কারখানাটি লিজ নিয়ে নতুন করে উৎপাদন শুরু হলে ২৫ হাজারের বেশি শ্রমিক আবার কাজে ফিরবেন; যা সাম্প্রতিক সময়ে দেশের শিল্পখাতে সবচেয়ে বড় কর্মসংস্থান পুনরুদ্ধারের ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এই প্রকল্পে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বাংলাদেশিদের প্রতিষ্ঠান ইকোমিলি। শুরুতে তারা ২০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। প্রয়োজনে তা ১০০ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বাড়ানো হবে।

রিভাইভাল জানায়, তারা কারখানাটি পূর্ণাঙ্গভাবে পুনরায় চালু করবে, পুরোনো ব্যবস্থাপনা দলকে ফিরিয়ে আনবে এবং আগের সব কর্মীকে পুনর্বহাল করবে। কারখানায় জাপানি ব্যবস্থাপনা ও কার্যক্রমের শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে জাপান থেকে অভিজ্ঞ শীর্ষ কর্মকর্তাদের আনা হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, রিভাইভাল বেক্সিমকোর আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের সঙ্গে আবার সংযোগ স্থাপন করবে এবং নতুন বৈশ্বিক অংশীদারও যুক্ত করবে। শুধু কম খরচে পোশাক উৎপাদন নয়, বরং বাংলাদেশকে সৃজনশীলতা ও ব্র্যান্ড উদ্ভাবনের কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করাই তাদের লক্ষ্য।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, রিভাইভাল প্রজেক্টস লিমিটেড, বেক্সিমকো ও জনতা ব্যাংকের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তির খসড়া গত ৮ অক্টোবর জমা দেওয়া হয়েছে। আগামী মঙ্গলবার জনতা ব্যাংকের বোর্ড সভায় এটি পর্যালোচনা হবে এবং চলতি মাসেই চুক্তি সইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।

রিভাইভাল ও ইকোমিলির শীর্ষ কর্মকর্তারা নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে ঢাকায় এসে আনুষ্ঠানিক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।

রিভাইভালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা হুদা মোহাম্মদ ফয়সাল বলেন, “এটা শুধু কারখানা চালু করা নয়—হাজারো পরিবারের মর্যাদা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ। প্রতিটি ফিরে আসা চাকরি নতুন করে আস্থা এবং আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলবে।”

ইকোমিলির প্রেসিডেন্ট ড. ফারহান এস. করিম বলেন, “একজন প্রবাসী বাংলাদেশি হিসেবে দেশের এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা পুনরায় চালু করতে সহায়তা করতে পেরে আমি গর্বিত। এটি ব্রেইন ড্রেইনের গল্প নয়—এটি ব্রেইন গেইনের গল্প। আমরা একসঙ্গে মানুষের জীবিকা ফেরানোর পাশাপাশি দেশের শিল্পখাতকে নতুন প্রাণ দিতে চাই।”

বেক্সিমকো লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওসমান কায়সার চৌধুরী বলেন, “সরকারের নির্দেশে বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত আমাদের টেক্সটাইল বিভাগ সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ চালিয়ে গেছে। ৪২ হাজার কর্মী ও কর্মকর্তার চাকরি রক্ষা করা এবং প্রতি মাসে প্রায় ৪০ মিলিয়ন ডলারের রপ্তানি ধরে রাখা ছিল আমাদের প্রধান দায়িত্ব। আর্থিক সংকটের মধ্যেও আমরা অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতিগুলো সচল রেখেছি, যাতে যেকোনো মুহূর্তে কারখানা চালু করা যায়। রিভাইভালের উদ্যোগে সেটি এখন সম্ভব হচ্ছে।”

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে উৎপাদন শুরু হলে ২৫ হাজারের বেশি শ্রমিক আবার কাজে ফিরতে পারবেন।

রিভাইভাল আশা করছে, ২০২৭ সালের মধ্যে বছরে ৫০০ কোটি টাকা মুনাফা অর্জন করতে পারবে, যা বকেয়া ঋণ পরিশোধ এবং শিল্পটির দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।

প্রসঙ্গত, একসময় দেশের টেক্সটাইল খাতের শীর্ষ উৎপাদন কেন্দ্র ছিল বেক্সিমকো টেক্সটাইল। তিন দশক সফলভাবে উৎপাদনের পর হঠাৎ ঋণসংকটে বন্ধ হয়ে গেলে হাজারো শ্রমিক চাকরি হারান, আশপাশের এলাকার অর্থনীতি ভেঙে পড়ে।

রিভাইভালের এই বিনিয়োগকে সেই বিপর্যয় থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর বড় সুযোগ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

এএ

 

ব্যাংকার প্রতিবেদন

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন