ব্যাংকার প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৯:১০, ৫ আগস্ট ২০২৫ | আপডেট: ০৯:১০, ৫ আগস্ট ২০২৫
দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এক ধাপ এগিয়ে রয়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। সরকারের খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, বাংলাদেশে এ মুহূর্তে চাল ও গম মিলে মোট ২১ লাখ ৩১ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মজুদ আছে।
সরকারের বর্ষপুর্তি উপলক্ষ্যে গণমাধ্যমকে দেয়া তথ্যে এ মজুদের কথা জানা গেছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয় জানায়, বর্তমানে সরকারিভাবে ১৯ লাখ ৫৪ হাজার টন চাল এবং ১ লাখ ৭৭ হাজার টন গম মজুদ আছে। এ বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত মজুদের এই লক্ষ্যমাত্রায় আরও ৫ লাখ টন চাল ও চার লাখ টন গম আমদানীর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
খাদ্যপণ্যের বর্তমান পরিস্থিতি এবং এ বাজার ব্যবস্থায় চালের দাম ডিসেম্বর ২০২৪ এর তুলনায় জুন ২০২৫ পর্যন্ত পাইকারী ও খুচরা বাজারে যথাক্রমে ১.২২ টাকা ও ১.০৪ টাকা কমেছে বলে সরকারি তথ্যে উল্লেখ করা হয়েছে।
সরকারিভাবে এ বছর ৫ লাখ ৩৫ হাজার মেট্রিকটন ধান ও ১৯ লাখ ৬৭ হাজার মেট্রিকটন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। গতবছরের তুলনায় চলতি বছর ধান ও চাল মিলে মোট ৪ লাখ ৬১ হাজার মেট্রিকটন খাদ্যশস্য বেশি সংগ্রহ করেছে সরকার।
সরকারের কৃষি বিপনন অধিদপ্তরের সূত্র জানায়, জুন ২০২৪ মাসের তুলনায় জুন ২০২৫ মাসে মোটা চালের কেজি প্রতি জাতীয় পাইকারী গড় মুল্য প্রায় ১.৭৩ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং খোলা আটার কেজি প্রতি পাইকারী গড় মুল্য ০.৬৩ টাকা হ্রাস পেয়েছে। অন্যদিকে মোটা চালের কেজি প্রতি খুচরা মুল্য ২.১৮ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। আটা খোলা এর খুচরা মুল্য ০.৮৮ টাকা হ্রাস পেয়েছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চলতি অর্থ বছরে মধুপুর, বরিশাল, ময়মনসিংহ ও নারায়ণগঞ্জে ৪টি আধুনিক সাইলো নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হওয়ার ফলে সরকারি খাদ্যশস্য মজুদ ধারণ ক্ষমতা ২৩ লাখ ৮৮ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে।
এই মুহূর্তে সরকারি গুদামে খাদ্যপণ্য মজুদ আছে ১১ লাখ ৮৬ হাজার ৪০৮ টন। এর মধ্যে চাল সাড়ে সাত লাখ টন এবং গম চার লাখ ২৮ হাজার ৩৩৫ টন। বাকি খাদ্যপণ্যের মধ্যে ধান মজুদ রয়েছে। গত বছর এই সময়ে খাদ্যপণ্য মজুদ ছিল ১৪ লাখ চার হাজার টন। এর মধ্যে চাল ছিল ১২ লাখ ৪৮ হাজার ৩৫৪ টন এবং গম ছিল এক লাখ ৫৬ হাজার ২৩৫ টন।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পদস্থ কর্মকর্তারা বলেন, এই মজুদকে সন্তোষজনক বলা যাবে না, আবার ঝুঁকিপুর্ণ বলাও ঠিক হবে না। মজুদ আরও বাড়ানো দরকার। এ ব্যাপারে আমাদের বেশ কিছু উদ্যোগ রয়েছে। এর মধ্যে দুই লাখ টন চাল-গম কেনার চুক্তি হয়েছে। স্থানীয়ভাবে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ টন চাল কেনার টার্গেট আছে। তা পূরণ হবে বলে আশা করছি। পাশাপাশি আমদানি করা যেসব চাল-গম পাইপলাইনে আছে সেগুলো শিগগিরই আমরা পেয়ে যাব। এ ছাড়া সম্প্রতি বন্যায় ফসলের যে ধরনের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করা হয়েছিল, তা হয়তো হবে না। এদিক দিয়েও বলা যায় এ বছর দেশের খাদ্যশস্য মজুদের পরিমাণ ভাল।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আরও জানান, দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদনের জমির পরিমাণ কমে যাওয়ায় প্রায় ১৮ কোটি মানুষের জন্য খাবার নিশ্চিত করা সরকারের জন্য এখন বড় চ্যালেঞ্জ। অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকারের মজুদ বাড়াতে হচ্ছে। এখন ২২ লাখ টন খাদ্য মজুদের সক্ষমতা আছে। এটাকে বাড়িয়ে ৩০ লাখ টনে নিয়ে যাওয়া হবে। খাদ্য মজুদের সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়টি খুব বেশি প্রয়োজন।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশে সাতটি সাইলো গুদাম নির্মাণাধীন রয়েছে। এগুলোর প্রতিটিতে প্রায় ৫০ হাজার টন খাদ্যশস্য রাখা যাবে। এর মধ্যে দু-একটি সাইলো গুদাম এমন জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে, এর কোনো প্রয়োজন ছিল না। আগের সরকারের একজন মন্ত্রীর ইচ্ছায় টাঙ্গাইলের মধুপুরে ২২০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি সাইলো নির্মাণ করা হয়েছে। যেখানে মালপত্র আনা-নেওয়ার খরচ অনেক বেশি হবে। দাতাগোষ্ঠী ও সরকারি কর্মকর্তারাও রাজি ছিলেন না। সাধারণত এসব সাইলো নির্মাণ করা হয় নদীর পাড়ে বা যেখানে ট্রেন চলাচল করে। কিন্তু টাঙ্গাইলের পশ্চিমে যমুনা নদী থাকলেও সাইলোটি এমন জায়গায় করা হয়েছে, সেখানে ট্রাক ছাড়া অন্য কোনো বাহনে মালপত্র পরিবহন করা যাবে না।
ময়মনসিংহেও প্রায় একই অবস্থা। ময়মনসিংহ সাইলোতে পরে রেলপথ টানা হয়েছে। এগুলো ব্যবহারযোগ্য হলে মজুদ বাড়ানোর সুযোগ হবে।
খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, সরকারি খাতে গম আমদানীর উৎস বহুমুখিকরণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ২০২৪/২৫ অর্থ বছরে যুক্তরাষ্ট্রসহ আর্জেন্টিনা, বুলগেরিয়া ও ইউক্রেন থেকে গম আমদানী করা হয়েছে। চলতি ২০২৫ সালে আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশ থেকে সরকারী খাতে গম আমদানীর কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
দেশে খাদ্যশস্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরকারি ও বেসরকারি খাতে আমদানী বৃদ্ধি করা হয়েছে।
চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত খাদ্যশস্য মজুদের লক্ষ্যমাত্র ২৬ লাখ টনেরও বেশি রাখা হয়েছে।
সূত্র: বাসস
এএ
ব্যাংকার প্রতিবেদন