ঢাকা, শুক্রবার, ২২ আগস্ট ২০২৫

৬ ভাদ্র ১৪৩২, ২৭ সফর ১৪৪৭

আমদানির অনুমতি, খাতুনগঞ্জে কমতে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম

ব্যাংকার প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২১:২৫, ১৭ আগস্ট ২০২৫ | আপডেট: ২১:২৫, ১৭ আগস্ট ২০২৫

আমদানির অনুমতি, খাতুনগঞ্জে কমতে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম

দেশের বাজারে স্থলবন্দর দিয়ে প্রায় ৮ মাস পর প্রবেশ করেছে ভারতীয় পেঁয়াজ। ফলে দেশে পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। সরকার পেয়াঁজ আমদানির অনুমতি (আইপি) ও ভারত থেকে পেয়াঁজ আমদানির খবরের তিন দিনের ব্যবধানে দেশের বৃহত্তম ভোগ্য পণ্যের পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম কমেছে কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত।

আজ রোববার হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ৫ টি প্রতিষ্ঠানকে আরো ১৫০ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। এর আগে সোনা মসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে ১০০ টন ভারতীয় পেয়াঁজ দেশে ঢুকে।

ভারতসহ বিভিন্ন দেশের এসব পেঁয়াজ বাজারে ঢুকলে দাম আরো কমবে বলে মনে করছেন আড়তদাররা। 

ব্যবসায়ীরা জানান, দেশি পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণে গত ১২ আগস্ট দুপুরে সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি (আইপি) দেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। এমনকি পেঁয়াজের দাম কমানো ও সরবরাহ বাড়াতে শুধু ভারত থেকে নয়, ব্যবসায়ীরা যেখান থেকে আমদানি করতে চাইবে, সেখান থেকেই অনুমতি দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

বাণিজ্য উপদেষ্টার এমন সিদ্ধান্তের পর দুই আমদানিকারক ভারত থেকে ১০০ টন পেঁয়াজ আমদানি করেন। এসব পেঁয়াজ ১৪ আগস্ট সোনা মসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এই খবরে ১৫ আগস্ট থেকে চট্টগ্রামের চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে কমতে শুরু করে পেঁয়াজের দাম। সেদিন প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়। বর্তমানেও একই দরে পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে দেশী পেঁয়াজ। 

খাতুনগঞ্জে চলতি মাসের শুরুতে পেঁয়াজের বাজার ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করে। গত ২ আগস্ট প্রতি কেজি পেঁয়াজে ৬ টাকা বেড়ে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়। এরপর বাড়তে বাড়তে পাইকারি এই বড় বাজারে গত ১২ আগস্ট পর্যন্ত প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ঠেকে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায়। এতে বড় ধরনের ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ ক্রেতারা।

খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ কিনতে ভোক্তাকে গুনতে হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা। 

খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত ১২ আগস্ট বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে পেঁয়াজ আমদানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসার সঙ্গে সঙ্গে চাঁপাইনবাবগঞ্জের দুই আমদানিকারক ৫০ টন করে মোট ১০০ টন পেঁয়াজ আমদানি করেন। এসব পেঁয়াজ ১৪ আগস্ট সোনা মসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ভারতের মধ্যপ্রদেশ থেকে এসব পেঁয়াজ কিনে আনা হয়েছে।  ফলে বাজারে প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি হতে পারে, এই আশঙ্কায় গত কয়েকদিন ধরে পেঁয়াজের বিক্রিও কমে যায়।

আজ রোববার চট্টগ্রামের চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে পাবনা ও ফরিদপুরের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। দু’দিন আগে সেই পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৭৫ টাকা পর্যন্ত। এদিকে খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়।

জানা যায়, বর্তমানে দেশে তাহেরপুরী, বারি-১ (তাহেরপুরী), বারি-২ (রবি মৌসুম), বারি-৩ (খরিফ মৌসুম), স্থানীয় জাত ও ফরিদপুরী পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। ফলে বছর জুড়েই কোনও না কোনো জাতের পেঁয়াজ উৎপাদন হচ্ছে। দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২২ লাখ টন। এর মধ্যে ১৮ লাখ টন স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করা হয়। আর আমদানি করা হয় বাকি চার লাখ টন। মূলত এই আমদানিকৃত চার লাখ টন পেঁয়াজ বাজারের ওপর খুব বড় প্রভাব ফেলে।

খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস বলেন, ‘আমদানির সিদ্ধান্ত আসার পর থেকে খাতুনগঞ্জে দেশি পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। আমরা খবর পেয়েছি স্থলবন্দর দিয়ে দুই আমদানিকারক ভারত থেকে পেঁয়াজ এনেছেন।’

আমদানিকারক মো. মোবারক হোসাইন বলেন, ‘দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের উচিত সব আমদানিকারকে আমদানির অনুমতি দেওয়া। দেশের সব স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আনার মতো ২ থেকে ৩ হাজার আমদানিকারক রয়েছে। সবাই আমদানি করলে পেঁয়াজের দাম আরও কমে আসবে। 

কোরবান আলী নামের একজন ভোক্তা জানান, দেশে পেঁয়াজের বাজার কয়েকবার ডাবল সেঞ্চুরিও হয়েছে। কাজেই পেঁয়াজ নিয়ে আমাদের দেশের ব্যবসায়ীদের কারসাজির ঘটনা নতুন কিছু নয়। দেশে পেঁয়াজের উচ্চ ফলনের পরেও দাম বেড়েছে। কৃষকের কথা চিন্তা করে সরকার বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রাখলেও প্রকৃতপক্ষে কৃষকরা এর সুফল পাচ্ছেন না। মুনাফার বেশিরভাগই পাচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীরা। তারা পেঁয়াজ কিনে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বৃদ্ধি করে। তাই প্রশাসনকে বিষয়গুলোর দিকে সজাগ দৃষ্টি দিতে হবে। 

মোটকথা, সরকারের পক্ষ থেকে পেঁয়াজ  আমদানির সিদ্ধান্তে দেশের জনগণ উপকৃত হবে।

এএ

ব্যাংকার প্রতিবেদন

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন