ঢাকা, রোববার, ২০ জুলাই ২০২৫

৫ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৪ মুহররম ১৪৪৭

নওগাঁয় আমের উৎপাদন বেশি, রপ্তানি কম

ব্যাংকার প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২১:৪২, ১৯ জুলাই ২০২৫ | আপডেট: ২১:৪২, ১৯ জুলাই ২০২৫

নওগাঁয় আমের উৎপাদন বেশি, রপ্তানি কম

রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে প্রতিবছর অনেক আম বিদেশে রপ্তানি হলেও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে অনেকটা পিছিয়ে পাশের নওগাঁ।

নওগাঁ কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর জেলায় প্রায় ৫০ লাখ আমে ফ্রুট ব্যাগিং করা হয়েছে। প্রতিটি আমের গড় ওজন ৩০০ গ্রাম করে ধরলে জেলায় এ বছর প্রায় দেড় হাজার টন নিরাপদ আম উৎপাদন হয়েছে।

জানা গেছে, জেলার পোরশা, সাপাহার, নিয়ামতপুর ও পত্নীতলা উপজেলায় প্রচুর পরিমাণ রপ্তানিযোগ্য আম চাষ হলেও নানা কারণে অনেক চাষি বিদেশে আম রপ্তানি করতে পারছেন না। শুধু সাপাহার উপজেলার আম বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে গত তিন বছর থেকে। এসব আম রপ্তানি হয় ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। 

পর্যাপ্ত আম রপ্তানি করতে না পারার কারণ হিসেবে চাষিরা বলছেন, কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের (চুক্তিতে চাষাবাদ) ভিত্তিতে আম চাষ না হওয়া। আবার চুক্তি করার পর চুক্তি অনুযায়ী চাষিদের আম না নেওয়া একটি বড় সমস্যা। এছাড়া আম উৎপাদনকারী অঞ্চলে ভ্যাপার হিট ট্রিটমেন্ট (ভিএইচটি) প্ল্যান্ট না থাকা। নওগাঁ থেকে ঢাকার দূরত্বও অনেক। এ কারণে সেখানে আম নিয়ে যাওয়ার পর মান ধরে রাখা সম্ভব হয় না। এ জন্য প্রয়োজন আঞ্চলিক প্যাক হাউস। রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদনে কৃষকদের প্রশিক্ষণ বাড়ানো প্রয়োজন বলেও মনে করেন চাষিরা।

পত্নীতলার আম চাষি কবিরুল ইসলাম বলেন, মাত্র ২০ বিঘা জমিতে আম চাষ করেছি তবে সরাসরি রপ্তানি করতে পারিনি। সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা ও সহযোগিতা পেলে আগামী বছর থেকে নিজেই আম রপ্তানি করতে চাই।

সাপাহারের আম বাগানের মালিক সাখাওয়াত হোসেন জানান, তার ৯০০ বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের আম রয়েছে। ভালো দাম পাবার আশায় চলতি বছর ১৫ লাখ পিস আমে ফ্রুট ব্যাগিং করেছেন। রপ্তানিকারকরা বাগান থেকে আম সংগ্রহ করে নিজেরাই রপ্তানি করছেন। লাইসেন্স না থাকায় তিনি রপ্তানি করতে পারছেন না। 

তিনি বলেন, নওগাঁয় যে পরিমাণ রপ্তানিযোগ্য আম চাষ হয়, সে তুলনায় রপ্তানি হয় অনেক কম। রপ্তানি না বাড়লে আমের কাঙ্খিত দাম পাবে না চাষিরা। 

নওগাঁ জেলার পোরশার তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা রায়হান সিদ্দিকী প্রায় ২০০ বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের আমের বাগান করেছেন। বিদেশে রপ্তানির আশায় উত্তম কৃষিচর্চা (জিএপি) অনুসরণ করে চলতি বছর প্রায় ৩ লাখ আমে ফ্রুট ব্যাগিং করেছেন। সব ঠিক থাকলে এই উদ্যোক্তার বাগানেই এবার ৯০ টন নিরাপদ আম উৎপাদিত হবে। এরপরও গলায় আক্ষেপের সুর তার। বলেন, রপ্তানিকারকরা চুক্তিভিত্তিক আম সংগ্রহ করেন বাগান থেকে। নানা সমস্যার কারণে নিজেরা সরাসরি আম রপ্তানি করতে পারছেন না।

জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় এবার প্রতি হেক্টরে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৭৮ টন। সে হিসাবে ৩০ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৮৭ হাজার ২৩৪ টন। জেলায় আম্রপালি, বারি আম-৪, কাটিমন, বারি-১১, গৌড়মতী, নাক ফজলি, ল্যাংড়া, কিং অব চাকাপাত, মিয়াজাকি, অষ্টিনসহ বিভিন্ন জাতের আম চাষ হয়ে থাকে। 

সাপাহারের মুন অ্যাগ্রো ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী রেদোয়ানুর ইসলাম চঞ্চল বলেন, প্লেন ভাড়া বেশি হওয়া ছাড়াও আম রপ্তানির ক্ষেত্রে বেশকিছু বাধা আছে। কৃষি বিভাগের তত্ত্বাবধানে রপ্তানিকারক ও আম চাষি পর্যায়ে কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের ভিত্তিতে আম চাষের পরিসর বাড়াতে হবে। জেলায় গুটি কয়েক বড় আম চাষি কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের ভিত্তিতে আম চাষ করছেন। অন্যরা উত্তম কৃষিচর্চা অনুসরণ করে চাষ করেও রপ্তানির সুযোগ পাচ্ছেন না। 

সাপাহারের কৃষি উদ্যোক্তা ও বরেন্দ্র এগ্রো পার্কের স্বত্তাধিকারী সোহেল রানা বলেন, জেলা থেকে এখন পর্যন্ত ৮০০ টন আম বিদেশে রপ্তানি হয়েছে। আশা করছি, এ বছর ২ হাজার টন রপ্তানি হবে। 

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমের গুণগত মান রক্ষায় জেলায় অন্তত ৫০ লাখ আমে ব্যাগিং করা হয়েছে। রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদনের অভিজ্ঞতা বাড়ায় এ বছর চাষও হয়েছে অধিক। তবে আম রপ্তানিতে জটিলতা কমানো ও সরকারিভাবে সহযোগিতা পেলে জেলা থেকে বিপুল পরিমাণে রপ্তানির সম্ভাবনা দেখছেন উদ্যোক্তারা।

তিনি বলেন, জেলায় ভিএইচটি প্ল্যান্ট ও প্যাকিং হাউজ স্থাপনের জন্য তিন বছর আগে একটি প্রস্তাব কৃষি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সেটির অগ্রগতি নেই। আবারও মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ শুরু করা হয়েছে। 

সূত্র: বাসস

এএ

ব্যাংকার প্রতিবেদন

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন