ঢাকা, রোববার, ২২ জুন ২০২৫

৮ আষাঢ় ১৪৩২, ২৫ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

বাংলাদেশ সরকারের মালিকানায় চলে যেসব ব্যাংক

ব্যাংকার ডেস্ক

প্রকাশ: ১২:৫০, ১৯ জুন ২০২৫ | আপডেট: ১২:৫১, ১৯ জুন ২০২৫

বাংলাদেশ সরকারের মালিকানায় চলে যেসব ব্যাংক

বাংলাদেশে সরকারি এবং বেসরকারি দুই ধরনের ব্যাংকিং ব্যবস্থা চলমান রয়েছে। এর মধ্যে তফসিলি ব্যাংক এবং অ-তফসিলি ব্যাংক। তফসিলি ব্যাংকের সংখ্যা মোট ৬১টি এবং অ-তফসিলি ব্যাংকের সংখ্যা মোট ৫টি। তফসিলি ব্যাংকের মাঝে সরকারি ব্যাংক, বেসরকারি ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক এবং বিদেশি ব্যাংক রয়েছে।

ব্যাংকগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন রয়েছে ৬টি ব্যাংক। এগুলো সব তফসিলি বা তালিকাভুক্ত ব্যাংক। এসব ব্যাংকের মালিকানা সম্পূর্ণ বাংলাদেশ সরকারের। অর্থাৎ, এসব ব্যাংকে কোনো বেসরকারি মালিকানা নেই।

ব্যাংকগুলো হচ্ছে –

১. সোনালী ব্যাংক পিএলসি (Sonali Bank Limited)
২. জনতা ব্যাংক পিএলসি (Janata Bank PLC)
৩. অগ্রণী ব্যাংক পিএলসি (Agrani Bank PLC)
৪. রূপালী ব্যাংক পিএলসি (Rupali Bank)
৫. বেসিক ব্যাংক পিএলসি (BASIC Bank Limited)
৬. বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক পিএলসি (Bangladesh Development Bank PLC.)

উপরোক্ত তালিকায় উল্লিখিত ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ সরকারের মালিকানাধীন অবস্থায় গঠিত এবং পরিচালিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশ সরকার এসব ব্যাংক ব্যবহার করে দেশের জন্য প্রয়োজনীয় সকল লেনদেন সংক্রান্ত কার্যাবলী পরিচালনা করে আসছে। 

সোনালী ব্যাংক পিএলসি (Sonali Bank Limited)

সোনালী ব্যাংক ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের প্রথম সারির বড় ব্যাংকগুলোর মধ্যে সোনালী ব্যাংক একটি। এই ব্যাংকটি সদর দপ্তর মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা অবস্থিত।

২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর এটি ‘সোনালী ব্যাংক লিমিটেড’ নামে একটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধিত হয় এবং পরবর্তীতে ‘সোনালী ব্যাংক পিএলসি’ নামে নামকরণ করা হয়। সারাদেশে সোনালী ব্যাংক পিএলসির ১২৩০টিরও বেশি শাখা রয়েছে। এর মধ্যে দেশের অভ্যন্তরে ১২২৮টি এবং ভারতে ২টি (কলকাতা ও শিলিগুঁড়ি) শাখা পরিচালিত হচ্ছে।

জনতা ব্যাংক পিএলসি (Janata Bank PLC)

বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক হলো জনতা ব্যাংক। এই ব্যাংক ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই ব্যাংকের সদরদপ্তর জনতা ব্যাংক ভবন, ১১০, মতিঝিল ঢাকায়। জনতা ব্যাংকের দেশ বিদেশসহ সর্বমোট ৯২১টি শাখা রয়েছে। এর মধ্যে ৪টি বিদেশে।

এই ব্যাংক লন্ডনস্থ দি ব্যাংকার্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন করে ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত। শুধু তাই নয় এই ব্যাংক এশিয়ান ব্যাংকিং অ্যাওয়ার্ড অর্জনে করে ২০০৪ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত। 

জনতা ব্যাংক লিমিটেডকে ২০০৭ সালের ২১ মে একটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তর করা হয় এবং এর নাম পরিবর্তিত হয়ে জনতা ব্যাংক পিএলসি হয়। তবে এর শতভাগ মালিকানাই বাংলাদেশ সরকারের অধীনে রয়েছে।

অগ্রণী ব্যাংক পিএলসি (Agrani Bank PLC)

বাংলাদেশের বৃহত্তম রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে অগ্রণী ব্যাংক পিএলসি অন্যতম। ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ এই ব্যাংক প্রতিষ্ঠা হয়।  মূলত দুটি পাকিস্তানি ব্যাংক– হাবিব ব্যাংক লিমিটেড এবং কমার্স ব্যাংক লিমিটেডকে একত্রিত করে এই ব্যাংকটি গঠন করা হয়েছিল। এই ব্যাংকের সদর দপ্তর দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকায়।

অগ্রণী ব্যাংকের মোট শাখা রয়েছে ৯৭০টি। এর মধ্যে শহর অঞ্চলে রয়েছে ৪৩০টি এবং গ্রামীণ অঞ্চলে রয়েছে ৫৩৯টি। অগ্রণী ব্যাংক ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১০ সালে প্রথম ইসলামী ব্যাংকিং ইউনিট চালু করে। ১৪০০০+ বেশি কর্মচারি রয়েছে এই ব্যাংকের।

এই ব্যাংকটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে ২০০৭ সালের ১৭ মে। যদিও এর মালিকানা সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশ সরকারের হাতেই রয়েছে।

রূপালী ব্যাংক পিএলসি (Rupali Bank)

রূপালী ব্যাংক বাংলাদেশের একটি সরকারি বৃহৎ রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক। ১৯৭২ সালে রূপালী ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ ব্যাংকস অর্ডার অনুসারে তৎকালীন তিনটি বাণিজ্যিক ব্যাংক – মুসলিম কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড, অস্ট্রালেশিয়া ব্যাংক লিমিটেড এবং স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেডকে একীভূত করে গঠিত হয় রূপালী ব্যাংক।

পরবর্তীতে ১৯৮৬ সালের ১৪ ডিসেম্বর ব্যাংকটি একটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধিত হয়, যদিও এর সিংহভাগ শেয়ার বাংলাদেশ সরকারের মালিকানাধীন রয়েছে। এই ব্যাংকের ধরন পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি। প্রায় ৭১৬৪ জনের বেশি বেশি কর্মচারী রয়েছে এই ব্যাংকের।

এই ব্যাংকের সদর দপ্তর দিলকুশা, ঢাকা। রূপালী ব্যাংকের মোট শাখা রয়েছে ৫৮৬টি। রূপালী ব্যাংকের সরকারি শেয়ার হোল্ডিং হচ্ছে ৯০.১৯ শতাংশ। বাকি ৯.৮১ শতাংশ বেসরকারি শেয়ারহোল্ডার।

বেসিক ব্যাংক পিএলসি (BASIC Bank Limited)

বেসিক ব্যাংক বাংলাদেশের সরকারি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক। ২ আগস্ট, ১৯৮৮ সালে বেসিক ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। এই ব্যাংকের সদর দপ্তর মতিঝিল ঢাকা, বাংলাদেশ। এটি আর্থিক পরিষেবা মূলক ব্যাংক। 

১৯৮৯ সালের ২১ জানুয়ারি বেসিক ব্যাংকের আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু হয়। এই সময় এই ব্যাংকের ৩০ শতাংশ মালিকানা ছিল বাংলাদেশ সরকারের এবং ৭০ শতাংশ ছিল বিসিসি ফাউন্ডেশনের। ১৯৯২ সালের ৪ জুন থেকে এই ব্যাংকে সম্পূর্ণ মালিকানা বাংলাদেশ সরকারের।

বেসিক ব্যাংক ২০০৭ সালের মার্চ মাস থেকেই অনলাইন ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে বেসিক ব্যাংক এটিএম কার্ড, এসএমএস ব্যাংকিং ইত্যাদি সকল সেবা প্রদান করে। বর্তমানে সারা বাংলাদেশে বেসিক ব্যাংকের ৭২টি শাখা রয়েছে। ১৬টি এটিএম বুথ ও ৩৬টি উপ শাখা রয়েছে। এর পাশাপাশি বেসিক ব্যাংকের নিজস্ব একটি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট রয়েছে।

বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক পিএলসি (Bangladesh Development Bank PLC.)

বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক একটি সরকারি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক। বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক এবং বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থা নামক দুটি রাষ্ট্রীয় উন্নয়নমূলক আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে একীভূত করে ২০০৯ সালের ১৬ নভেম্বর পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক আত্মপ্রকাশ করে।

এই ব্যাংকের ধরন ব্যাংকিং, আর্থিক পরিষেবা। বর্তমানে এই ব্যাংকে প্রায় ৮০০ এর বেশি কর্মচারী রয়েছে। সারা দেশে বর্তমানে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের ৫৩টি শাখা রয়েছে। বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক পিএলসি-এর প্রধান কার্যালয় বিডিবিএল ভবন, ৮, রাজউক এভিনিউ, ঢাকা-১০০০ এই ঠিকানায় অবস্থিত।

এছাড়া বাংলাদেশে সরকারের মালিকানাধীন চারটি বিশেষায়িত ব্যাংক আছে। প্রতিটি ব্যাংক ভিন্ন ভিন্ন বিশেষ উদ্দেশ্য সামনে রেখে গঠন করা হয়েছে, যা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সেগুলো হলো:

১. বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক

২. প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক

৩. রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক

৪. কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি


বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি) ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তখন থেকেই দেশের কৃষি খাতে অসাধারণ অবদান রেখে চলেছে। মূলত কৃষকদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন আর কৃষি উৎপাদন বাড়ানোই এ ব্যাংকের প্রধান লক্ষ্য। সারাদেশে ১২০০টিরও বেশি শাখা রয়েছে, যা শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ব্যাংকটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও পুরস্কারও অর্জন করেছে।

সময় পাল্টানোর সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকও প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়েছে। মোবাইল ব্যাংকিং, ইন্টারনেট ব্যাংকিং এবং এটিএম সেবার মাধ্যমে গ্রাহকদের আরও সহজ ও দ্রুত সেবা দিয়ে আসছে। শুধু ঋণ প্রদানেই সীমাবদ্ধ নয়, তারা কৃষি প্রশিক্ষণ, বীজ বিতরণ এবং ফসল বীমার মতো সেবাও দিয়ে থাকে।

দীর্ঘ ৪৩ বছর ধরে দেশের কৃষি উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে এই ব্যাংকটি। কৃষকদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা আর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তারা দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে।

রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক

১৯৮৬ সালে মহামান্য রাষ্ট্রপতির নির্দেশে প্রতিটি বিভাগে একটি করে কৃষি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরপর ১৯৮৭ সালের ১৫ মার্চ এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের মাধ্যমে ব্যাংকটি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে।

রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক বা রাকাব মূলত দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী ও কৃষিঋণ সরবরাহকারী আর্থিক প্রতিষ্ঠান।

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক

প্রবাসী বাংলাদেশিদের আর্থিক সেবা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ সরকার ২০১০ সালে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে। ব্যাংকটি ১ বিলিয়ন টাকা মূলধন নিয়ে যাত্রা শুরু করে, যার মধ্যে ৯৫% অর্থ এসেছে প্রবাসী শ্রমিক কল্যাণ ফান্ড থেকে এবং বাকি ৫% সরবরাহ করেছে সরকার।

অভিবাসীদের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক আইন-২০১০ প্রণয়ন করা হয়। পরে, ২০১১ সালের ২০ এপ্রিল এই ব্যাংকের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।

কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি

কমিউনিটি ব্যাংক পিএলসি ২০১৯ সালের ১১ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরু থেকেই ব্যাংকটি কমিউনিটি ভিত্তিক ব্যাংকিং সেবা দিয়ে আসছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আধুনিক ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যেও কাজ করছে তারা। গ্রাহকদের আর্থিক চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তাদের অবদান সত্যিই উল্লেখযোগ্য।

কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে পরিচালিত হয়। ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদে র‍্যাব সদস্যরাও আছেন। বর্তমানে ব্যাংকটি ৬৭টি শাখার মাধ্যমে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এর প্রধান কার্যালয় ঢাকার গুলশান ১-এ অবস্থিত পুলিশ প্লাজা কনকর্ডে।

এএ

ব্যাংকার ডেস্ক

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন