ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫

৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ২২ জ্বিলকদ ১৪৪৬

বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের সব ব্যাংকের অভিভাবক ও শেষ আশ্রয়স্থল

ব্যাংকার প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১০:২৮, ৬ মে ২০২৫ | আপডেট: ১০:২৮, ৬ মে ২০২৫

বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের সব ব্যাংকের অভিভাবক ও শেষ আশ্রয়স্থল

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দেশ শত্রুমুক্ত হবার পরে স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের ডেপুটি গভর্নর (ডিজি) অফিস অর্থাৎ ঢাকা কার্যালয়কেই পূর্ণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয়। শুধু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্ব নয়, পুরো ব্যাংক ব্যবস্থা পুনর্গঠনের দায়িত্বও জরুরি ভিত্তিতে এ কার্যালয়ের উপর বর্তায়। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতো বাংলাদেশ ব্যাংককেও বহুবিধ কার্যক্রম সম্পাদন করতে হয়।

নিচে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান প্রধান কার্যক্রমের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হলো:

নোট প্রচলন
দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি প্রধান দায়িত্ব হলো নোট ইস্যু বা প্রচলন। সরকারিভাবে ছাপানো এক, দুই ও পাঁচ টাকার কাগুজে নোট এবং আনুষঙ্গিক ধাতব মুদ্রা ব্যতীত দেশে প্রচলিত সকল প্রকার নোট বাংলাদেশ ব্যাংক ইস্যু করে। বাংলাদেশ ব্যাংক আদেশ ১৯৭২ অনুযায়ী ব্যাংকিং বিভাগ থেকে ইস্যু বিভাগ পৃথক হবে। ইস্যু বিভাগের সম্পদ বিতরণ বিভাগের দায়সমূহ ভিন্ন কোনো দায় হবে না। বিতরণ বিভাগের সম্পদের কোনো অংশ গঠন করতে অন্য ব্যাংক নোটসমূহ অথবা অনুমোদিত অনুরূপ মুদ্রা, অনুমোদিত বৈদেশিক বিনিময় অথবা সিকিউরিটিজের বিনিময় ব্যতীত বিতরণ বিভাগ ব্যাংকিং বিভাগ বা কোনো ব্যক্তিকে ব্যাংক নোট প্রদান করবে। বিতরণ বিভাগের সম্পদ এর সম্পূর্ণ দায় থেকে কম হবে না এবং সম্পদের সম্পূর্ণ পরিমাণ, অনুরূপ মূল্যের সম্পদ যা ব্যাংকের সঙ্গে পরামর্শক্রমে সরকার অফিসিয়াল গেজেট প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট করবে, স্বর্ণ মুদ্রা, স্বর্ণ বাট, রৌপ্য বাট, বিশেষ উত্তোলন অধিকার আকু ডলার, ইসলামি দিনার অথবা অনুমোদিত বৈদেশিক মুদ্রায় রাখবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় এবং দেশের অন্যান্য স্থানে স্থাপিত কারেন্সি চেস্টের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক নোট ইস্যু কার্য সম্পাদন করে থাকে। দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত কারেন্সি চেস্টসমূহ সোনালী ব্যাংকের অফিসার এবং ট্রেজারি অফিসারদের তত্ত্ববধানে পরিচালিত হয়। এমন ব্যবস্থার ফলে একদিকে যেমন তহবিল হস্তান্তরের অসুবিধা অনেকটা দূর হয়েছে, অন্যদিকে ট্রেজারি বা সাব-ট্রেজারিগুলোর পক্ষেও স্বল্প নগদ তহবিলের দ্বারা কাজ চালানো সহজ হয়েছে।

বাংলাদেশে বর্তমানে দুই ধরনের মুদ্রা রয়েছে; কাগুজে নোট এবং ধাতব মুদ্রা। কাগুজে নোট যেমন-৫, ১০, ৫০, ১০০, ৫০০, ১০০০ টাকা ইত্যাদি। এ নোটগুলোকে অসীম বৈধ মুদ্রা বলা হয়। কেননা, এসব নোটের সাহায্যে যে কোনো পরিমাণ অর্থের লেনদেন অনুমোদিত। পক্ষান্তরে ধাতব মুদ্রা, যেমন-৫০০, ২০০, ১০০, ৫০, ২৫, ১০ পয়সা ইত্যাদি মুদ্রা হলো সসীম বিহিত মুদ্রা। এসব মুদ্রার সাহায্যে নির্দিষ্ট
পরিমাণ অর্থের লেনদেন করার আইনগত অনুমোদন রয়েছে।

সরকারের ব্যাংক
অন্যান্য দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতো বাংলাদেশ ব্যাংকও সরকারের ব্যাংক হিসেবে কাজ করে। ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ ব্যাংক আদেশ অনুযায়ী সরকার এবং ব্যাংকের মধ্যে সম্মত শর্তে সরকার তার সকল অর্থ, রেমিট্যান্স এবং বাংলাদেশে ব্যাংকিং লেনদেনসমূহের দায়িত্ব ব্যাংকের উপর দিতে পারবে এবং বিশেষভাবে এর সমস্ত নগদ উদ্বৃত্ত বিনা সুদে ব্যাংকে জমা রাখতে পারবে। এটি নির্দিষ্ট ব্যবসা পালনে সরকার অথবা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি। বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারের পূর্বানুমতি সাপেক্ষে দেশের ভেতরে বা বাইরে সরকারের কারণে দেশি বা বৈদেশিক মুদ্রা পরিশোধের জন্য চাহিবামাত্র বাহক বা ব্যাংকারকে পরিশোধযোগ্য যে কোনো বিনিময় বিল, হুন্ডি, প্রমিসরি নোট অথবা চুক্তি প্রদান, গ্রহণ, তৈরি এবং বিলি করতে পারবে। ব্যাংক উপযুক্ত সময় ও শর্তে যেমনটি নির্ধারণ করবে, সেই রকম সরকার কর্তৃক যোগ্য ঘোষিত
যৌথ প্রতিষ্ঠানকে ঋণ ও অগ্রিম দিতে পারবে। সরকারের জামানতের বিপরীতে অনুরূপ ঋণ অথবা অগ্রিমের তারিখ থেকে নির্ধারিত সময় ধার্য হবে অনধিক ৯০ দিন, অথবা চাহিবামাত্র পরিশোধযোগ্য অথবা যাতে উক্ত ঋণ বা অগ্রিম দেওয়া হয়েছে সেই কর্পোরেশন কর্তৃক ইস্যুকৃত মুচলেকা এবং ঋণপত্রসমূহের বিপরীতে চাহিবামাত্র অথবা উক্ত ঋণ বা অগ্রিমের তারিখ থেকে নির্ধারিত সময় অনধিক আঠারো মাসের অবসানে পরিশোধযোগ্য, অনুরূপ ঋণ বা অগ্রিমের তারিখ থেকে অনধিক আঠারো মাসের মেয়াদপূর্তি। তবে শর্ত থাকে যে, উক্ত মুচলেকা এবং
ঋণপত্রসমূহ সরকার কর্তৃক গ্যারান্টিযুক্ত।

ব্যাংকের অভিভাবক এবং শেষ আশ্রয়স্থল
ব্যাংকিং ব্যবসা পরিচালনার জন্য কোম্পানিসমূহকে অনুমতি প্রদান, বাংলাদেশের সকল তফসিলি ব্যাংক এবং এ ধরনের সকল আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন, নিয়ন্ত্রণ এবং তদারকির একচ্ছত্র দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের উপর ন্যস্ত। অন্যান্য সংশ্লিষ্ট আইন বিভিন্ন সময় যেভাবে সংশোধিত হবে সেভাবে দায়িত্ব পালন এবং ক্ষমতা ভোগ করবে। বাংলাদেশ ব্যাংক দেশি বা বিদেশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের ঋণের শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করতে পারবে। তফসিলি ব্যাংকসমূহের ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের ভাঙানোর যোগ্য বিলসমূহ পুনঃবাট্টাকরণ বা উপযুক্ত ঋণপত্রের বিপরীতে ঋণ প্রদান করে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃবাট্টাকরণ স্কিমও আছে। এই স্কিমের মূল উদ্দেশ্য হলো দেশে একটি সুসংগঠিত বিলের বাজার গড়ে তোলা। এছাড়া এ স্কিমের আওতায় দেশের প্রধান প্রধান অর্থকরী কৃষিজ পণ্য যেমন পাট, চা ইত্যাদির জন্য আর্থিক সহায়তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এ স্কিমের আওতায় দেশের তফসিলি ব্যাংকসমূহ ‘বিলম্বে পরিশোধ শর্তযুক্ত প্রতিশ্রুতিপত্র’ এর বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করতে পারে।

বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণ
অন্যান্য দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতো বাংলাদেশ ব্যাংকও বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয়-বিক্রয় করে থাকে। বৈদেশিক মুদ্রা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হারে অনুমোদিত ডিলারের কাছ থেকে ক্রয় এবং তাদের কাছে বিক্রয় করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক তার বিনিময় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এমনভাবে রেখেছে যাতে আন্তর্জাতিক অর্থসংক্রান্ত লেনদেনের ব্যাপারে অনুমোদিত ডিলারগণ কোনো অসুবিধায় না পড়ে বা এ ব্যাপারে যাতে অহেতুক বিলম্বের সৃষ্টি না হয়। আন্তর্জাতিক লেনদেনের ব্যাপারে প্রতিটি অনুমোদিত ডিলারকে প্রয়োজনীয় আদেশ-নির্দেশ প্রদান করা হয়। বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যাপারে অনুমোদিত ডিলার রয়েছে। ব্যাংকের নির্দেশিত হারে তারা বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয়-বিক্রয় করে। প্রত্যেক অনুমোদিত ডিলারকে বৈদেশিক মুদ্রার ক্রয়-বিক্রয়ের পরিসংখ্যান তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংককে পাঠাতে হয়। এসব তথ্য পরবর্তী সময়ে দেশের আন্তর্জাতিক লেনদেনের উদ্বৃত্ত বের করার কাজে ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক আমদানি-বাণিজ্যের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে দায়ী নয়। সরকার আমদানি সংক্রান্ত লাইসেন্স প্রদান করে এবং লাইসেন্স ইস্যুর পর আমদানি-ব্যয় পরিশোধ অনেকটা অটোমেটেড হয়ে যায়। অবশ্য সকল প্রকার আমদানি লাইসেন্স বাংলাদেশ ব্যাংকে রেজিস্ট্রি করে নিতে হয়। রেজিস্ট্রিভুক্ত নয় এমন কোনো আমদানি লাইসেন্সের সাহায্যে কোনো আমদানিকারককে ঋণ-প্রত্যায়নপত্র খোলার অনুমতি দেওয়া হয় না। বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের আন্তর্জাতিক লেনদেনের অদৃশ্য ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করে। শিক্ষা, চিকিৎসা, ভ্রমণ ইত্যাদি উদ্দেশ্যে বিদেশে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেরও তত্ত্বাবধায়ক।

ঋণ নিয়ন্ত্রণ/তদারকি
বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার, ১৯৭২ এর ধারা ৭ এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক তার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি করে। এর সহায়ক কর্ম হিসেবে বিশেষ খাতে ঋণ প্রদানসহ ঋণের সুদহার এর বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশনা প্রদান করা হতো। পরবর্তী সময়ে দেশে মুক্ত বাজার অর্থনীতির সুবাদে এবং আর্থিক খাত সংস্কার কর্মসূচির আওতায় ১৯৯০ সাল থেকে ঋণের সুদ হারসহ ঋণ নীতিমালা উদারিকরণ করা হয়। এর ফলে ব্যাংকগুলো ঋণ-ঝুঁকি বিশ্লেষণকরতঃ বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা ও বিধি-বিধানের আলোকে স্বীয় বিবেচনায় সুদহার নির্ধারণসহ যে কোনো খাতে ঋণ বিতরণ করতে পারে। তবে ব্যাংকসমূহকে তাদের সার্বিক ঋণ কার্যক্রম পরিচালনায় বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রণীত বিভিন্ন নীতিমালা অনুসরণ করতে হয়। ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ (২০১৩ পর্যন্ত সংশোধিত) এর ধারা ৪৯ এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ ব্যাংক সকল বা বিশেষ কোনো ব্যাংককে নির্দিষ্ট বা বিশেষ শ্রেণির লেনদেনে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করতে পারে। তাছাড়া, ঋণ শৃঙ্খলার স্বার্থে বাংলাদেশ ব্যাংক সাধারণভাবে সকল ব্যাংক কোম্পানি বা কোনো বিশেষ ব্যাংক-কোম্পানি বা বিশেষ শ্রেণির ব্যাংক কোম্পানির জন্য ঋণ শ্রেণিকরণ ও সঞ্চিতি সংরক্ষণ, ঋণ মওকুফ, পুনঃতফসিলিকরণ কিংবা পুনর্গঠন সংক্রান্ত বিষয়সমূহে বাধ্যতামূলকভাবে অনুসরণীয় নির্দেশ প্রদান করতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংক তার পরিদর্শন বিভাগসমূহের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর ঋণসহ সার্বিক কার্যকম নিয়মিতভাবে সরেজমিনে পরিদর্শন করে। তাছাড়া, ডিপার্টমেন্ট অব অফ-সাইট সুপারভিশনসহ বিভিন্ন বিভাগ ব্যাংকগুলোর ঋণ কার্যকম নিয়মিতভাবে অফসাইট সুপারভিশন ও মনিটরিং করে। পরিদর্শনে ঋণ সম্পর্কিত কার্যকম পরিচালনায় ব্যাংকের কোনো অনিয়ম/ত্রুটি-বিচ্যুতি উদ্ঘাটিত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বিরুদ্ধে
ব্যাংক-কোম্পানি আইন, ১৯৯১ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

বিবিধ কার্যাবলি
বাংলাদেশের ব্যাংক ব্যবস্থা সুসংহত এবং সুসংগঠিত করার ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রভূত ক্ষমতা রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক তার লক্ষ্যসমূহ অর্জনের জন্য এবং এর কার্যক্রম ও দায়িত্বসমূহ সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য বাংলাদেশের ব্যাংক কোম্পানি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বা প্রতিনিধিদের কাছ থেকে সংগ্রহ করতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংক সুদসহ বা সুদ ব্যতীত সরকার, বৈদেশিক সরকার, দেশি ও বিদেশি ব্যাংক, দেশি-বিদেশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের টাকা থেকে আমানত হিসেবে গ্রহণ করতে পারে। প্রাইজবন্ড এবং তা থেকে তোলা রেয়াতি এবং অন্যান্য জাতীয় সঞ্চয়পত্র দলিল ইস্যু, যোগান, বিক্রয় ও ক্রয়ের জন্য; মুদ্রা নোট ছাপানো এবং মুদ্রা তৈরির জন্য অথবা ঐসব মুদ্রা ও ব্যাংক নোট গ্রহণ ও প্রদান এবং বিনিময় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য; ঋণতথ্য অধিদপ্তরের কার্যক্রম পরিচালনাসহ প্রয়োজনীয় উদ্দেশ্য সাধনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক সম্পূর্ণ মালিকানাভুক্ত একটা সাবসিডিয়ারি অথবা ট্রাস্ট গঠন করতে পারে।

ব্যাংক ব্যবস্থার উন্নয়নের বিশেষ দিকসমূহের ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ বিভাগ (বর্তমানে ব্যাংকের প্রবিধি ও নীতি বিভাগ) পর্যালোচনা, মূল্যায়ন এবং নির্দেশনা প্রদান করে। দেশের কোনো তফসিলি ব্যাংক দেশের অভ্যন্তরে বা বাইরে কোনো শাখা অফিস স্থাপন করতে চাইলে তাকে আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিতে হয়। গতিশীল ব্যাংক ব্যবস্থা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এবং আমানতকারীদের স্বার্থ যাতে ক্ষুণ্ন না হয় সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সুপারভিশন সংক্রান্ত বিভাগগুলো সময় সময় তফসিলি ব্যাংকসমূহের হিসাব সরেজমিনে বা অফ-সাইট পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে। বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের তফসিলি ব্যাংকসমূহকে তাদের ব্যবসায় লেনদেন সম্পর্কে যে কোনো পরামর্শ দিতে পারে এবং যে কোনো পরিসংখ্যান তথ্য প্রদানের নির্দেশ দিতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের জন্য কিছু কার্য নিষিদ্ধ রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক আদেশ  অনুযায়ী তা প্রত্যক্ষ ঋণ অথবা দান অথবা ঋণে অংশগ্রহণ অথবা ঋণের দলিল দ্বয়ের দ্বারা কোনো আর্থিক সহায়তা প্রদান করবে না। কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বা অন্য কোনোভাবে কোনো আর্থিক, বাণিজ্যিক, কৃষি, শিল্প, অথবা অন্য কোনো দায়িত্ব পালনকারী প্রতিষ্ঠানে মালিকানার স্বার্থ রয়েছে এরূপ শেয়ারসহ, কোনো যৌথ প্রতিষ্ঠান অথবা কোম্পানির শেয়ার বাণিজ্যে নিযুক্ত থাকবে না। স্থাবর সম্পত্তি অথবা তার স্বত্বসম্পর্কিত দলিলের বন্ধক অথবা অন্য কোনোভাবে জামানতের উপর অগ্রিম অর্থ দেবে না, ঐ ক্ষেত্র ব্যতীত যেখানে উক্ত অগ্রিম কোনো কর্মচারীকে তার ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য কোনো বাড়ি তৈরি অথবা ক্রয় করতে দেয়া হয়; তা করা হয় উক্ত বাড়ির জামানতের বিপরীতে। 

কর্মচারী কোনো অনিরাপদ অগ্রিম এবং ঋণ নির্বাহ করবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন বিবরণী, পুস্তিকা প্রকাশ করে। এসব পুস্তিকা, বিবরণী প্রভৃতির বেশিরভাগ তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান এবং গবেষণা বিভাগ সংগ্রহ ও সংকলন করে। ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব কমিউনিকেশন্স এন্ড পাবলিকেশন্স কমিউনিকেশন্স সংক্রান্ত কাজের পাশাপাশি বার্ষিক রিপোর্ট, বাংলাদেশ ব্যাংক বুলেটিন, কারেন্সি ও ফাইন্যান্স রিপোর্ট, সাপ্তাহিক নির্বাচিত অর্থনৈতিক নির্দেশিকা, মাসিক বাংলাদেশ ব্যাংক পরিক্রমা ইত্যাদি মুদ্রণ ও প্রকাশ করে।

এএ

 

ব্যাংকার প্রতিবেদন

আরও পড়ুন