দি ব্যাংকার্স ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭:২১, ৫ মে ২০২৫ | আপডেট: ১৭:২১, ৫ মে ২০২৫
বিমাকারীর মৃত্যুর পর টাকা পাওয়া যায়, এমন ধারণা এখনও দেশের মানুষের মনে। কিন্তু এ খাতের সার্বিক ব্যবস্থাপনা পালটে গেছে। এখন আর আগের মতো এ ধারণা নেই। বিমা প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন পণ্য উপস্থাপন করছে। পণ্যগুলোর সহযোগী নানা বিমাও এখন রয়েছে। বিমা সম্পর্কে গ্রাহকদের মনে নানা নেতিবাচক ধারণা রয়ে গেছে কারণ এ সেবা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া যায় না।
সচরাচর মূল বিমা করলে স্বাস্থ্য, দুর্ঘটনা ও শিক্ষাবিমা নেওয়া যায়। তবে এখন কেউ আলাদা আলাদাভাবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যবিমা করতে পারেন। অনেক অভিভাবক সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে শিক্ষাবিমা নেওয়ার পরিকল্পনা করেন। আবার এককভাবে স্বাস্থ্যবিমাও উপস্থাপন করছে বেশ কয়েকটি কোম্পানি। আবার অনেক স্থানে ব্যাংক ও বিমা কোম্পানি যৌথভাবে ব্যাংকন্স্যুরেন্স নামে যৌথ বিমাসেবা দিচ্ছে।
বিমা কী?
বিমা কেন করবেন বোঝার আগে জরুরি বিষয়টি কী। বিমা কোনো সাধারণ সঞ্চয় নয়। বিমা এক ধরনের নিরাপত্তা। সুনির্দিষ্ট কিছু অনিশ্চয়তার বিপরীতে নিশ্চয়তা পাওয়া যায় বিমা করলে। বিমার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে সঞ্চয়। অর্থাৎ বিমা মূলত নিরাপত্তা ও সঞ্চয়ের সংমিশ্রণে গড়া আর্থিক পরিসেবা। বিমার বাড়তি সুবিধা, এটি আয়করমুক্ত।
সময়ের সাথে সাথে মানুষের জীবনের চাহিদায় বদল এসেছে। মানুষের আচার-ব্যবহার এবং জীবনের ধরনেও এসেছে বদল। ফলে জীবনবিমা প্রতিষ্ঠানগুলোও বিমা পরিসেবায় পরিবর্তন এনেছে। যেমন : এখন জীবনবিমা পলিসি নেওয়া এবং প্রিমিয়াম দিতে বিমা কোম্পানির অফিস যেতে হয় না। ক্রেডিট, ডেবিট কার্ড, অনলাইন ব্যাংকিং এমনকি এমএফএস সেবা দিয়ে বাড়িতে বসেই প্রিমিয়াম জমা দেওয়া যায়। আছে পলিসিসংক্রান্ত এসএমএস সেবা ও হটলাইন। তবে সব কোম্পানি এই সেবা দিচ্ছে না।
গার্ডিয়ান লাইফের জীবনবিমা ও স্বাস্থ্যবিমা নেওয়ার জন্য বাংলালিংক সিমের গ্রাহকরা পছন্দের বান্ডিল প্যাক কিনলেই এ সেবা পান। আবার অনেক জীবনবিমা পলিসিতে ভ্রমণবিমাকে সহযোগী বিমা করা যাচ্ছে। সেই সঙ্গে মূল বিমার সঙ্গে হাসপাতাল, দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন খাতে কয়েক বছরে বেশ কিছু উদ্ভাবনী পণ্য নিয়ে এসেছে দেশের বিমা কোম্পানিগুলো। দেশে গ্রাহকদের কাছে জনপ্রিয় কয়েকটি বিমাপণ্য নিয়ে আলোচনা করা হলো :
স্বাস্থ্যবিমা
বাংলাদেশে চিকিৎসা বাবদ একজন ব্যক্তিকে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থব্যয় করতে হয়। বিগত দেড় যুগের বাজেট বিশ্লেশষণ করে অর্থনীতিবিদরা জানিয়েছেন, এ খাত বরাবরই নানা প্রতিবন্ধকতার শিকার। এ ধরনের বাস্তবতায় স্বাস্থ্যবিমা সবচেয়ে কার্যকর।
দেশে গুরুতর রোগে আক্রান্তের অধিকাংশই বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। সরকারি হাসপাতালে সেবার মান নিয়ে অভিযোগ থাকায় অনেকে বেসরকারি হাসপাতালের ওপর নির্ভর করেন। কিন্তু দেশের আর্থসামাজিক বাস্তবতায়, চিকিৎসাসেবা বহন করতে গিয়ে অনেক পরিবারই আর্থিক সংকটে পড়েন। ফলে দেশে স্বাস্থ্যবিমার প্রসারের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এর প্রতিফলন কম।
স্বাস্থ্যবিমা মূল বিমা পলিসির সঙ্গে নেওয়া যায়। আবার পৃথক বিমা হিসেবেও নেওয়া যায়। ডেলটা লাইফ, মেটলাইফ ও গার্ডিয়ান লাইফের মতো প্রতিষ্ঠান এ ক্ষেত্রে জনপ্রিয়।
শিক্ষাবিমা
প্রত্যেক অভিভাবক তার সন্তানের সফলতা কামনা করেন। আধুনিক বিশ্বে সফল হতে হলে উচ্চশিক্ষার বাড়তি গুরুত্ব রয়েছে। তবে উচ্চশিক্ষার পথ মসৃণ করতে হলে সঠিক আর্থিক পরিকল্পনা জরুরি। অনেক সময় পরিবারে কোনো আকস্মিক দুর্ঘটনা কিংবা দুর্যোগ ঘটতে পারে। এমন সময়ে যেন সন্তানের পড়ালেখা বন্ধ না হয় সেজন্য শিক্ষাবিমা অনেক কার্যকর। দুর্ভাগ্যজনকভাবে পলিসিগ্রহীতার মৃত্যু হলে দায় বাদ দিয়ে এককালীন প্রদেয় হিসেবে পুরো বিমা অঙ্কে দেওয়া হয়। এ ছাড়া বিমাগ্রহীতার মৃত্যু না হলে সন্তানের শিক্ষালাভ সহজতর করতে নির্দিষ্ট সময় পরপর নির্দিষ্ট হারে বিমা অঙ্ক ফেরত দেওয়া হয়।
পেনশন বিমা
অবসর জীবনে আর্থিক নিরাপত্তা নিয়ে ভাবছেন? আপনার প্রতিষ্ঠানে পেনশন সুবিধা নেই? সেক্ষেত্রে পেনশন বিমা হতে পারে আপনার জন্য একটি ভালো আর্থিক পণ্য। কর্মজীবনে নির্দিষ্ট সময় প্রিমিয়াম প্রদানের মাধ্যমে অবসরকালে নিয়মিত আয়ের নিশ্চয়তা দেয় এই বিমা। এই পলিসির প্রধান সুবিধাগুলো হলো সরকারের পেনশন স্কিমের মতো নির্দিষ্ট অঙ্কের পেনশনসেবা নেওয়া যায়। প্রিমিয়াম দেওয়ার সময় প্রয়োজনে ঋণসুবিধা পাওয়া যায়। অতিরিক্ত প্রিমিয়ামের মাধ্যমে দুর্ঘটনাজনিত বিমাসেবা নেওয়া যেতে পারে। পাশাপাশি অতিরিক্ত প্রিমিয়ামের মাধ্যমে জীবনকালে বিমাসুবিধাসহ অন্যান্য সুবিধা যোগ করা যায়। অর্থাৎ নিয়মিত পেনশনের সঙ্গে বিমাসুবিধার সংমিশ্রণ ঘটেছে এই বিমায়।
প্রবাসী বিমা
র্যামিট্যান্স যোদ্ধাদের আর্থিক নিরাপত্তা নিয়ে শংকা থাকে বেশি। তাদের নিশ্চয়তা দিতে নতুন প্রজন্মের কিছু বিমা কোম্পানি প্রবাসীদের ও তাদের পরিবারের আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এ ধরনের বিমাপণ্য চালু করেছে। এ ধরনের বিমায় স্বল্প প্রিমিয়ামে পলিসি নেওয়া যায়। এর আওতায় কোনো প্রবাসী কর্মী যদি কর্মজীবনে মৃত্যুবরণ করেন, তাহলে মনোনীতকে এককালীন অর্থ দেওয়া হবে এবং তাঁর মরদেহ দেশে আনার জন্যও আর্থিক সুবিধা দেওয়া হয়। পাশাপাশি অসুস্থতাজনিত কারণে হাসপাতালে ভর্তি হলে চিকিৎসাসুবিধা ও প্রবাসে চাকরি হারানোর পর আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়।
বিমা বিক্রির আধুনিক পদ্ধতি ব্যাংকাস্যুরেন্স
বিমা বিক্রির সবচেয়ে আধুনিক পদ্ধতি ব্যাংকান্স্যুরেন্স। এ ধরনের বিমা ব্যাংকের মাধ্যমে বিক্রি হয়। ব্যাংকগুলো তাদের বিস্তৃত শাখা নেটওয়ার্ক এবং গ্রাহকের তথ্যভান্ডার ব্যবহার করে জীবনবিমা ও সাধারণ বিমা—উভয় ধরনের পলিসি বিক্রি করতে পারে। এটা নতুন কোনো বিমাপণ্য নয়, বরং বিদ্যমান যেসব বিমা পলিসি আছে, সেগুলো বিক্রির আধুনিক পদ্ধতি। দেশের বেশ কয়েকটি ব্যাংক ও বিমা কোম্পানি যৌথভাবে এ সেবা দিচ্ছে। এ ধরনের বিমাপণ্যে গ্রাহক নির্দিষ্ট ব্যাংকের মাধ্যমেই বিমাসেবা নিতে পারছেন। তারা ব্যাংকেই লেনদেন করছেন এবং বিমা কোম্পানিতে না গিয়েও বিমাসেবা পাচ্ছেন।