ঢাকা, শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫

৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ-২০২৫ খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন

ব্যাংকার প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১০:৪৬, ২১ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১০:৪৬, ২১ নভেম্বর ২০২৫

সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ-২০২৫ খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন

বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্টের জন্য একটি পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার জন্য অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ, ২০২৫ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এই অনুমোদন দেওয়া হয়।

পরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমরা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পূর্ণ বাস্তবায়ন এবং বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত পদক্ষেপ সম্পন্ন করেছি।’ 

উপদেষ্টা পরিষদের সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত সম্পর্কে অবহিত করার জন্য এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল।

উপদেষ্টা পরিষদ পূর্বে প্রস্তাবিত আইনটি নীতিগতভাবে অনুমোদন করেছে উল্লেখ করে অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, সুপ্রিম কোর্টের জন্য একটি পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশনের পাশাপাশি জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সুপারিশগুলোর মধ্যে অন্যতম। 

আইন উপদেষ্টা বলেন, জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের আলোচনায় সকল পক্ষ একমত হয়েছে যে, বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য সুপ্রিম কোর্টের জন্য একটি পৃথক সচিবালয় থাকা উচিত।  

তিনি বলেন, বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য গত ২০-৩০ বছর ধরে বাংলাদেশের নাগরিক সমাজের মনে সুপ্রিম কোর্টের জন্য একটি পৃথক সচিবালয়ের আকাঙ্ক্ষা বিদ্যমান।

তিনি আরও বলেন, ‘আজ আমাদের জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন। অনেক রাজনৈতিক দল অনেক আশ্বাস দিয়েছে, অনেক কথা বলেছে। অবশেষে, আমরা এখন একটি ভালো জায়গায় এসে পৌঁছেছি।’ 

আইন উপদেষ্টা জানান, সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ ২০২৫ অনুযায়ী নিম্ন আদালতের বিচারকদের বদলি, পদোন্নতি, পদায়ন ও শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থাসহ সব ধরনের ক্ষমতা সরকার থেকে সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়ের ওপর ন্যস্ত করা হচ্ছে।

প্রফেসর আসিফ নজরুল বলেন, অধ্যাদেশটি সম্পূর্ণ কার্যকর হলে আইন মন্ত্রণালয় বা সরকার নিম্ন আদালতের বিচারকদের ওপর আর কোনো নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারবে না। এসব বিষয় পুরোপুরি সুপ্রিম কোর্ট নিজস্ব সচিবালয়ের মাধ্যমে পরিচালনা করবে।

তবে তিনি জানান, সচিবালয় পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত ও কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত অধ্যাদেশটি কার্যকর হবে না।

আইন উপদেষ্টা বলেন, এটি এখনই কার্যকর হচ্ছে না, এজন্য সচিবালয় গঠন ও কার্যকর করতে হবে। আমরা আশা করছি, কয়েক মাসের মধ্যেই হাইকোর্ট সচিবালয় পূর্ণাঙ্গভাবে গঠিত ও কার্যক্রমে যাবে। এরপর নিম্ন আদালতের বিচারকদের তদারকি, নিয়ন্ত্রণ, শৃঙ্খলা ও ছুটি-সংক্রান্ত সব বিষয় সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় থেকেই পরিচালিত হবে বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন, নিম্ন আদালতের আর্থিক ব্যবস্থাপনা বা আর্থিক স্বায়ত্তশাসনের বিষয়টিও সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়ের অধীনে আসবে।

প্রফেসর আসিফ নজরুল জানান, বিচার বিভাগের যেকোনো উন্নয়ন প্রকল্প—উচ্চ আদালত হোক বা নিম্ন আদালত পর্যালোচনার জন্য সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়ের নেতৃত্বে একটি স্ক্রুটিনি কমিটি থাকবে। কমিটির প্রধান হবেন প্রধান বিচারপতির সম্মতিতে মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি।

এই কমিটি কোনো প্রকল্পের সুপারিশ করলে এবং যদি ব্যয়ের পরিমাণ ৫০ কোটি টাকার মধ্যে থাকে, তাহলে প্রধান বিচারপতি এককভাবেই অনুমোদন দেবেন; অন্য কোনো অনুমোদন লাগবে না। ব্যয় ৫০ কোটি টাকার বেশি হলে প্রধান বিচারপতি বিষয়টি পরিকল্পনা কমিশনের মাধ্যমে একনেকে পাঠাবেন। ফলে সুপ্রিম কোর্টকে ৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত প্রকল্প অনুমোদনের ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে, তিনি যোগ করেন।

সভা শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে মোট আটটি এজেন্ডা ছিল এবং সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ ২০২৫ ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

এএ

 

ব্যাংকার প্রতিবেদন

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন