ঢাকা, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫

৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ২৫ জ্বিলকদ ১৪৪৬

মোট ব্যাংকঋণের ৭৫ শতাংশ পুঞ্জীভূত অল্পসংখ্যক মানুষের হাতে

ব্যাংকার প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৮:৩৬, ২২ মে ২০২৫ | আপডেট: ১৯:২১, ২২ মে ২০২৫

মোট ব্যাংকঋণের ৭৫ শতাংশ পুঞ্জীভূত অল্পসংখ্যক মানুষের হাতে

দেশের মোট ব্যাংকঋণের ৭৫ শতাংশ পুঞ্জীভূত ১.২ শতাংশ গ্রাহক হিসাবে। ব্যাংকঋণের প্রায় ৬৩ শতাংশই বিতরণ করা হয়েছে ঢাকায়। আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রায় সাড়ে ১৫ শতাংশ ঋণ বিতরণ করা হয়েছে চট্টগ্রাম জেলায়। সে হিসাবে দেশের ব্যাংকঋণের ৭৮ শতাংশই ঢাকা ও চট্টগ্রামে কেন্দ্রীভূত।

এই চিত্র পেয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট বা পিআরআই। ১৯৭১ থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত দেশের ১১ হাজার ৩০০টির বেশি ব্যাংক শাখার তথ্য নিয়ে গবেষণা করে এ তথ্য পায় সংস্থাটি। গবেষণাপত্রটি বুধবার ‘বাংলাদেশে আর্থিক খাতের উন্নয়নের গতিধারা’ শীর্ষক সেমিনারে তুলে ধরা হয়।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থাটির প্রধান অর্থনীতিবিদ আশিকুর রহমান। তিনি বলেন, গবেষণার তথ্য ইঙ্গিত দেয়, বাংলাদেশের সম্পদ ব্যাপকভাবে পুঞ্জীভূত হয়ে আছে। দেশের খুব অল্পসংখ্যক মানুষের হাতে সম্পদের বড় অংশ পুঞ্জীভূত হয়ে আছে।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের ব্যাংক হিসাবের শূন্য দশমিক ১ শতাংশ হিসাবধারীর কাছে ব্যাংকের মোট আমানতের প্রায় ৪২ শতাংশ অর্থ জমা রয়েছে। এ ধরনের ব্যাংক হিসাবে ১ কোটি টাকা বা তার বেশি অর্থ জমা রয়েছে। ২০১৯ সালে এসব ব্যাংক হিসাবে জমা ছিল ব্যাংকের মোট আমানতের ৪৪ দশমিক ৩ শতাংশ অর্থ।

গবেষণায় পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পিআরআই বলছে, দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে গ্রাহকের যে ঋণ হিসাব রয়েছে, তার মধ্যে ১ দশমিক ২ শতাংশ হিসাবের বিপরীতে কোটি টাকা বা তার বেশি ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এই অল্পসংখ্যক হিসাবেই বিতরণ করা হয়েছে মোট ব্যাংকঋণের ৭৫ শতাংশের বেশি অর্থ। 

পিআরআইয়ের গবেষণায় বলা হচ্ছে, গত পাঁচ বছরে দেশের ১২৬টি উপজেলায় ঋণ হিসাব কমেছে। এর বিপরীতে ৬০টি উপজেলায় ঋণ হিসাব ১০০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। দেশের মোট ব্যাংকঋণের প্রায় ৬৩ শতাংশই বিতরণ করা হয়েছে ঢাকায়। আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রায় সাড়ে ১৫ শতাংশ ঋণ বিতরণ করা হয়েছে চট্টগ্রাম জেলায়। সেই হিসাবে দেশের ব্যাংকঋণের ৭৮ শতাংশই ঢাকা ও চট্টগ্রামে কেন্দ্রীভূত। 

পিআরআই বলছে, এ তথ্য ভৌগোলিকভাবে আর্থিক বৈষম্যের ইঙ্গিত দেয়।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাংক খাতে সারা দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমানত জমা রয়েছে ঢাকা জেলায়, যা ব্যাংকের মোট আমানতের ৫১ দশমিক ৭৯ শতাংশ। আমানতের দিক থেকে এর পরের অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা ও নারায়ণগঞ্জ। ঢাকায় মাথাপিছু আমানতের পরিমাণ ৬ লাখ ১৩ হাজার টাকা। এরপর ২ লাখ ৬০ হাজার মাথাপিছু আমানত রয়েছে চট্টগ্রামে। আমানতের দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে থাকা সিলেট জেলায় মাথাপিছু আমানতের পরিমাণ ১ লাখ ৮ হাজার টাকা। 

গবেষণায় আরও বলা হয়, ৬০টির বেশি জেলায় মাথাপিছু আমানতের পরিমাণ ১ লাখ টাকার নিচে রয়েছে। তবে গত পাঁচ বছরে ৪৭টির বেশি জেলায় আমানতের পরিমাণ ৬০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমানত বেড়েছে শরীয়তপুর ও জামালপুরে। পাঁচ বছরের ব্যবধানে এই দুই জেলায় আমানত বেড়েছে ৯০ শতাংশ।

গবেষণায় পাওয়া তথ্যে আরও বলা হয়, ১৯৭১ সালে দেশে মোট ব্যাংক শাখা ছিল ১ হাজার ১৯৬টি। ২০২৪ সালে সেই সংখ্যা ১০ গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৩৬১টিতে। ২০১৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ব্যাংকের মোট ঋণের মধ্যে শিল্প খাতে বিতরণ করা হয়েছে ৪০ থেকে ৪২ শতাংশ। একই সময়ে কৃষি খাতে দেওয়া ঋণের হার ছিল ৪ থেকে ৫ শতাংশ।

পিআরআইয়ের চেয়ারম্যান জায়দি সাত্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিন ারে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। বিশেষ অতিথি ছিলেন ডেপুটি গভর্নর মো. হাবিবুর রহমান।

এএ

ব্যাংকার প্রতিবেদন

আরও পড়ুন