ঢাকা, সোমবার, ০৯ জুন ২০২৫

২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১২ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

বাংলাদেশে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকের প্রতিষ্ঠা ও অগ্রগতি

ব্যাংকার প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২০:১৭, ৩১ মে ২০২৫ | আপডেট: ২০:১৭, ৩১ মে ২০২৫

বাংলাদেশে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকের প্রতিষ্ঠা ও অগ্রগতি

১৯৮২ সালের নভেম্বর মাসে ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করেন। এ সময় তারা বাংলাদেশে বেসরকারি খাতে যৌথ উদ্যোগে একটি ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় আইডিবি’র অংশগ্রহণের আগ্রহ ব্যক্ত করেন। ১৯৮৩ সালের ১৩ মার্চ ঢাকা আন্তর্জাতিক ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড নামে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রথম সুদমুক্ত ব্যাংক প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

১৯৮৩ সালের ২৮ মার্চ পর্যন্ত ঢাকা আন্তর্জাতিক ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড নামে বাংলাদেশের প্রথম ইসলামী ব্যাংকের প্রস্তুতিমূলক কাজ সম্পন্ন করা হয় এবং এ নামেই তখন পর্যন্ত ব্যাংকের সাইনবোর্ড ও প্রচার-পুস্তিকা ব্যবহার করা হয়। এরপর ৩০ মার্চ থেকে এই ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড নামে কার্যক্রম শুরু করে।

এর ধারাবাহিকতায় ১৯৮৭ সালে আল বারাকা ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড প্রতিষ্ঠা লাভ করে। পরবর্তী সময়ে ব্যাংকটির নাম পরিবর্তন করে প্রথমে ওরিয়েন্টাল ব্যাংক এবং পরে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক লিমিটেড রাখা হয়। এরপর ১৯৯৫ সালে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, সোস্যাল ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড এবং ১৯৯৭ সালে [ফয়সাল ইসলামিক ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়] ফয়সাল ইসলামিক ব্যাংক অব বাহরাইন ইসি (ইসলামিক ব্যাংকার্স) এর একটি শাখা এদেশে কার্যক্রম শুরু করে। পরে ফয়সাল ইসলামিক ব্যাংক অব বাহরাইন ইসি (ইসলামিক ব্যাংকার্স) এর নাম হয় শামিল ব্যাংক অব বাহরাইন ইসি (ইসলামিক ব্যাংকার্স)। ২০০৫ সালে শামিল ব্যাংক অব বাহরাইন ইসি (ইসলামিক ব্যাংকার্স) এর সকল দায় ও সম্পদ অধিগ্রহণ করে ব্যাংক আল ফালাহ্ বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করে।

১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত সোস্যাল ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডের বর্তমান নাম সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড। ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড। এ ছাড়া ২০০৪ সালের ১ জুলাই থেকে এক্সিম ব্যাংক লি: এর কার্যক্রম শরিয়াহ্সম্মত পদ্ধতিতে রূপান্তরিত করে।

২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক লি: সনাতন পদ্ধতি পরিহার করে শরিয়াহ্ভিত্তিক কার্যত্রম চালু করে এবং নাম পরিবর্তন করে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড নাম ধারণ করে।

সর্বশেষ বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনক্রমে ২০১৩ সালে ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেড নামে একটি নতুন শরিয়াহ্ভিত্তিক ব্যাংক যাত্রা শুরু করে।

উল্লিখিত আটটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংক ছাড়াও সনাতনী পদ্ধতিতে পরিচালিত নয়টি ব্যাংকের বিশটি শাখা বর্তমানে শরিয়াহ্ভিত্তিক ব্যাংকিং পরিচালনা করছে। এ ব্যাংকসমূহ হচ্ছে প্রাইম ব্যাংক লিমিটেড, ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেড, দি প্রিমিয়ার ব্যাংক লিমিটেড, যমুনা ব্যাংক লিমিটেড, দি সিটি ব্যাংক লিমিটেড, এবি ব্যাংক লিমিটেড, এইচএসবিসি, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক।

এর মধ্যে প্রাইম ব্যাংক লিমিটেড ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করে ১৯৯৫ সালে; ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেড, দি প্রিমিয়ার ব্যাংক লিমিটেড, যমুনা ব্যাংক লিমিটেড এবং দি সিটি ব্যাংক লিমিটেড ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করে ২০০৩ সালে; এবি ব্যাংক লিমিটেড, এইচএসবিসি ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করে ২০০৪ সালে এবং ব্যাংক আল ফালাহ্ এই কার্যক্রম শুরু করে ২০০৫
সালে।

২০০৮ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পৃথক ইসলামী ব্যাংকিং শাখার পরিবর্তে কনভেনশনাল শাখার মধ্যেই ‘ইসলামিক ব্যাংকিং উইন্ডো’ খোলার লাইসেন্স প্রদান শুরু করে। বর্তমানে সাতটি ব্যাংকের ২৩টি ‘ইসলামিক ব্যাংকিং উইন্ডো' পরিচালিত হচ্ছে। এ ব্যাংকসমূহ হচ্ছে দি ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড, ব্যাংক এশিয়া লিমিটেড, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেড, পূবালী ব্যাংক লিমিটেড, অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড, সোনালী ব্যাংক লিমিটেড।

এর মধ্যে দি ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড এবং ব্যাংক এশিয়া লিমিটেড ইসলামী ব্যাংকিং শুরু করে ২০০৮ সালে; স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেড ইসলামী
ব্যাংকিং শুরু করে ২০০৯ সালে; পূবালী ব্যাংক লিমিটেড, অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড এবং সোনালী ব্যাংক লিমিটেড ইসলামী ব্যাংকিং শুরু করে ২০১০ সালে।

১৯৮৩ সালে ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের মাত্র তিনটি শাখা নিয়ে বাংলাদেশে শরিয়াহ্ভিত্তিক ব্যাংক ব্যবস্থা চালু হলেও বর্তমানে সারাদেশে বিভিন্ন ব্যাংকের শরিয়াহ্ভিত্তিক ব্যাংকের শাখা/উইন্ডো সংখ্যা ৮০২টি। যথাযথভাবে ইসলামী ব্যাংকিং পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় ইসলামী ব্যাংকসমূহ সম্মিলিতভাবে ২০০১ সালের ১৬ আগস্ট ‘সেন্ট্রাল শরিয়াহ বোর্ড ফর ইসলামিক ব্যাংকস অব বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠা করে।

১৯৯২ সালের ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রশাসন বিভাগের একটি নির্দেশনার মাধ্যমে গবেষণা বিভাগের বিশেষ সমীক্ষা ও প্রকাশনা উপবিভাগের অধীনে ‘ইসলামী অর্থনীতি সেল’ গঠিত হয়। পরে ১৯৯৪ সালের ২৩ জানুয়ারি গবেষণা বিভাগের একটি অফিস নির্দেশের মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য স্বতন্ত্র ইসলামী ব্যাংকিং আইনের খসড়া/ব্যাংক কোম্পানি আইনে সংযোজিতব্য প্রয়োজনীয় সংশোধনীর খসড়া রূপরেখা প্রণয়ন, বিভিন্ন ধরনের ইসলামিক ফাইন্যান্সিয়াল ইন্সট্রুমেন্টের খসড়া রূপরেখা প্রণয়নের উদ্দেশ্যে তৎকালীন ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ বিভাগের ‘ইসলামী ব্যাংকিং সেল’ এবং গবেষণা বিভাগের ‘ইসলামী অর্থনীতি সেল’ এর কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ‘ওয়ার্কিং কমিটি অন ইসলামিক ব্যাংকিং অ্যাক্ট অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল ইন্সট্রুমেন্টস’ গঠন করা হয়।

এ ছাড়া ২০০৯ সালের ৯ নভেম্বর বাংলাদেশে পরিচালিত শরিয়াহ্ভিত্তিক ব্যাংকসমূহের জন্য ‘গাইডলাইন্স ফর ইসলামী ব্যাংকিং’ জারি করা হয়।

সূত্র: বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস

এএ

 

ব্যাংকার প্রতিবেদন

আরও পড়ুন