ব্যাংকার ডেস্ক
প্রকাশ: ১১:৩৩, ৯ জুন ২০২৫ | আপডেট: ১১:৩৪, ৯ জুন ২০২৫
কর্পোরেট গভর্নেন্স হলো পরিচালনা পর্ষদ, নির্বাহী ও প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য ইউনিটের কার্যক্রম, ক্ষমতা ও দায়বদ্ধতার আওতায় সুসমন্বয় করে প্রতিষ্ঠানের কার্যসম্পাদন প্রক্রিয়াকে গতিশীল ও সমুন্নত রাখার প্রক্রিয়া। এর ফলে প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক ব্যবসায়িক কার্যক্রম নৈতিকতার মানদণ্ডে পরিচালিত হয়ে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি পালনের মাধ্যমে শেয়ার হোল্ডারদের মূল্যবোধ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
কর্পোরেট গভর্নেন্সের উদ্দেশ্য
- ব্যাংকের পর্ষদ এবং ব্যবস্থাপনার দক্ষতা ও পেশাদারিত্ব নিশ্চিতকরণ
- ব্যাংকের বিভিন্ন বিষয় নিয়ন্ত্রণে প্রত্যেক পর্যায়ে কর্তৃত্ব ও দায়িত্ব সুনির্দিষ্টকরণ
- প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জনে দক্ষ ও কুশলী লোকবল নিয়োগের পাশাপাশি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ।
সামগ্রিক আর্থিক, অপারেশনাল ও প্রশাসনিক নীতি নির্ধারণীসহ অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন, আয় ব্যয়, ঋণ প্রদান ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনাসহ সামগ্রিক ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে পর্ষদ, চেয়ারম্যান, প্রধান নির্বাহী এবং উপদেষ্টাদের সুনির্দিষ্ট কর্তৃত্ব ও দায়িত্ব বণ্টন জরুরি। কর্পোরেট গভর্নেন্সের প্রয়োগজনিত দুর্বলতা ও ব্যর্থতা কোনো প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সংকটের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কারণ হতে পারে। বেশকিছু আর্থিক সেবাদানকারী কোম্পানির উপর পরীক্ষামূলক পর্যবেক্ষণ থেকে দেখা যায় যে, কর্পোরেট গভর্নেন্সের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারিক ঝুঁকি গ্রহণের কারণে তারা তাদের নিরাপত্তা প্রদানের উদ্দেশ্য পূরণ করতে ব্যর্থ হয়।
২০০৮ সালে কিছু ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ধারাবাহিক ব্যর্থতায় আর্থিক সংকটের সূত্রপাত হয়, যা আন্তর্জাতিক ঋণবাজারকে কার্যত স্থবির করে দেয় এবং এ অবস্থায় সরকারি হস্তক্ষেপ অপরিহার্য হয়ে পড়ে।
২০০৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ‘sub-prime’ বাজারের সংকটের সঙ্গে উদ্ভূত তারল্য হ্রাসের স্পষ্ট প্রভাব বিশ্বের অনেকগুলো দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকসমূহের উপর দৃশ্যমান হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনার অদূরদর্শিতা এবং তদারকিতে শৈথিল্য সংকটের জন্য দায়ী বলে প্রমাণিত হয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বর্তমান অস্থিতিশীলতাকে বিশ্ব মহামন্দার পর সবচেয়ে ভয়াবহ আর্থিক সংকট বলে অভিহিত করা হয়। এমতাবস্থায়, প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের জন্য অবস্থা খতিয়ে দেখাসহ কর্পোরেট গভর্নেন্সের প্রধান শিক্ষণীয় বিষয়টি অনুধাবন করে বিশ্বসংকট থেকে একটা অর্থবহ শিক্ষা গ্রহণ করা প্রত্যাশিত এবং এটাই কর্পোরেট গভর্নেন্সের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়।
কর্পোরেট গভর্নেন্স কাঠামোর দুর্বলতার কারণে অনেক ক্ষেত্রে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিও ব্যর্থ হয়। কর্পোরেট গভর্নেন্স কাঠামোর ব্যর্থতার জন্য দায়ী অন্য দিকগুলো হলো ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি, অ্যাকাউন্টিং মান এবং রেগুলেটরি বিষয়াবলি। ভালো সময়ের সুবাদে অনেকে মূল বিষয় থেকে তাদের দৃষ্টি সরিয়ে নেওয়ার জন্যই এ পরিণতির শিকার হতে হয়। কোনো প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের পর্যায়ক্রমিক মূল্যবৃদ্ধিই ভালো কর্পোরেট গভর্নেন্সের নির্দেশক নয়। বরং ইতিহাসের অভিজ্ঞতার আলোকে দেখা যায় যে, এর বিপরীতটাই ঘটে থাকে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের ঝুঁকিবহন ক্ষমতা সুস্পষ্টভাবে নিরূপণ ও সুষ্ঠু তদারকি নিশ্চিত করার মাধ্যমে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমকে স্বাধীন এবং সক্ষম করে সৎ ও নিষ্ঠাবান ‘ঝুঁকি সচেতন’ সংস্কৃতি গড়ে তোলা প্রয়োজন।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক গৃহীত প্রতিটি ঝুঁকি পৃথকভাবে পরিমাপের জন্য সুনির্দিষ্ট আর্থিক মডেল ব্যবহার করতে হবে এবং তথ্য হিসেবে গ্রাহকদের আর্থিক বিবরণী ব্যবহার করতে হবে যাতে কোম্পানিটির প্রকৃত এবং সঠিক আর্থিক চিত্র প্রতিফলিত হয়। এসবই ব্যবসায় উন্নয়ন এবং মূলধন পর্যাপ্ততা নিরূপণের অপরিহার্য হাতিয়ার। তারল্য ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার বিষয়টি মূলধন পর্যাপ্ততা থেকে ভিন্ন। বিশেষত অস্থিতিশীল বাজারে যেখানে তীব্র প্রতিযোগিতা বিরাজমান সেখানে তারল্য ঝুঁকি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
প্রকৃতপক্ষে আলোচ্য সংকট তারল্য ঝুঁকির মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে ঋণ ঝুঁকিতে রূপান্তরিত হয়। ফলে এক পর্যায়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সম্পদ ধরে রাখতে পারে না এবং সম্পদের মূল্য কমতে কমতে একেবারে শূন্যের কোঠায় নেমে আসতে পারে। সুতরাং ব্যাংকের অধিকারে থাকা সম্পদের নিরপেক্ষ মূল্যায়ন এবং শ্রেণিকৃত সম্পদের তথ্যের যথাযথ প্রকাশ গুরুত্বপূর্ণ।
ফলে বাজারচাহিদা ও জোগানের ভারসাম্যের মাধ্যমে নিরূপিত নিরপেক্ষ মূল্যায়নের ভিত্তিতে Mortgage Backed Securities রাতারাতি মূল্য হারিয়ে ফেলে। কার্যকর ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানের উত্তম কর্পোরেট গভর্নেন্স এবং যথার্থ অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণের উপর নির্ভর করে। কার্যকর ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও যথার্থ অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপকের সকল পর্যায়ের কর্মীদের অঙ্গীকারাবদ্ধ রাখার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ন্ত্রণ এবং তদারকি আর্থিক অস্থিতিশীলতার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় প্রতিরক্ষা হিসেবে কাজ করে। প্রাতিষ্ঠানিক তদারকি অবশ্যই কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে যা ক্রমবর্ধমানভাবে আইনগত সত্তার চেয়ে ব্যবসায়িক সত্তাকে অগ্রাধিকার দেবে। ব্যাসেল কমিটি অন ব্যাংকিং সুপারভিশন সুষ্ঠু ও কার্যকর সুপারভাইজরি নীতিমালা প্রণয়ন করেছে এবং ন্যূনতম ও উন্নত মান সংযোজন করে চলেছে। এই কমিটির Basel Capital Accord এ প্রস্তাবিত সংশোধনীতে আন্তর্জাতিকভাবে সক্রিয় ব্যাংকসমূহের জন্য অধিকতর গতিশীল, ঝুঁকিভিত্তিক এবং প্রক্রিয়াগত কাঠামো নির্দেশ করা হয়েছে।
ব্যাংকসমূহের অন্তর্নিহিত ঝুঁকির সঙ্গে অত্যাবশ্যক প্রয়োজনীয় মূলধন সংরক্ষণ অধিকতর সঙ্গতিপূর্ণ করার মাধ্যমে ব্যাংক ও তাদের সুপারভাইজরি প্রতিষ্ঠানের জন্য কতিপয় পরিমাপ পদ্ধতি সরবরাহ করা এসব সংশোধনীর উদ্দেশ্য। আন্তর্জাতিক বাজার ব্যবস্থাপনায় নীতিনির্ধারকগণ কার্যকর বাজারশৃঙ্খলা স্থাপনের মাধ্যমে আর্থিক অস্থিতিশীলতার বিরুদ্ধে তৃতীয় স্তরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সৃষ্টি করতে পারেন। কার্যকর বাজারশৃঙ্খলা স্থাপনের জন্য পর্যাপ্ত ও অর্থবহ তথ্য প্রকাশ দ্বারা একইসঙ্গে সুষ্ঠু অ্যাকাউন্টিং মান এবং একটি দক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য আইনগত কাঠামো প্রয়োজন। একটি প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত চিত্র এর আর্থিক বিবরণীতে তুলে ধরতে নিরীক্ষকের সততা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কেবল একটি দক্ষ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ কাঠামো যথেষ্ট নয় যদি না তা একটি লিখিত নীতিমালা ও কার্যপ্রণালির সত্যিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কৃতি দ্বারা সমর্থিত হয়।
বস্তুত একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মসংস্কৃতি প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদ ও নিয়োগকৃত ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনা দ্বারা নির্ধারিত হয়। কোনো প্রতিষ্ঠানের অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে নীতিমালা নির্ধারণ এবং প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক সংস্কৃতি নির্ধারণের মাধ্যমে পরিচালনা পর্ষদ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার হোল্ডার ও ব্যবস্থাপকদের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করে। স্বার্থসংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহ থেকে প্রতিনিধি; আর্থিক শিল্প সম্পর্কে জ্ঞান আছে এমন আমানতকারী প্রতিনিধিসহ নিরপেক্ষ সদস্য সমন্বয়ে সুগঠিত একটি পরিচালনা পর্ষদ কেবল অপূরণীয় ঝুঁকি এড়ানোর জন্য নীতিমালা প্রণয়নই নয় বরং দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য অর্জনের কৌশলও নির্ধারণ করে থাকে।
বাংলাদেশে ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় দক্ষ কর্পোরেট গভর্নেন্স নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পরিচালনা পর্ষদ, পর্ষদের চেয়ারম্যান, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এবং বেসরকারি ব্যাংকসমূহের সামগ্রিক আর্থিক পরিচালনা ও প্রশাসনিক নীতিমালা প্রণয়ন এবং সামগ্রিক ব্যবসায়িক কার্যক্রম, অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক পরামর্শক/উপদেষ্টার দায়িত্ব, কর্তব্য ও ক্ষমতা সুনির্দিষ্ট বণ্টন বিধৃত করে বিস্তারিত গাইডলাইন প্রণয়ন করেছে।
ব্যাংকের পর্ষদ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ করবে এবং বার্ষিক কর্মকৌশল ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করবে। ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা করবে। এ প্রেক্ষিতে বার্ষিক বিবরণীতে লক্ষ্য অর্জনে ব্যবসায়িক সফলতা/ব্যর্থতার বিষয়ে পর্ষদের পর্যালোচনা অন্তর্ভুক্ত থাকবে। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বিষয়ে তাদের মতামত/সুপারিশের বিষয়ে শেয়ার হোল্ডারদের অবহিত করা হবে। এছাড়া প্রধান নির্বাহীর মূল্যায়ন নির্দেশক নির্ধারণ করবে এবং সময়ে সময়ে সে বিষয়ে মূল্যায়ন করবে। বিদ্যমান আইন, নীতি ও পদ্ধতি অনুযায়ী পর্ষদের অনুমোদনসাপেক্ষে যথাযথভাবে ঋণ প্রস্তাব প্রণয়ন, অনুমোদন, ছাড়করণ, আদায়, পুনঃতফসিলিকরণ ও অবলোপন করার পদ্ধতি প্রণয়ন করতে হবে। পর্ষদ ঋণ/বিনিয়োগ অনুমোদনের ক্ষমতা সুনির্দিষ্টভাবে যতটা সম্ভব প্রধান নির্বাহী ও তাঁর অধীন নির্বাহীদের অর্পণ করতে পারেন। কোনো পরিচালক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ঋণ অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না।
পর্ষদ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার নীতি প্রণয়ন করবে এবং ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে তা বাস্তবায়ন পর্যালোচনা করবে। ঋণ/বিনিয়োগ পোর্টফোলিওর আশানুরূপ গুণমান অর্জনে পর্ষদ ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অনুসরণ করে চলবে। গ্রাহকদের নিকট থেকে প্রাপ্ত অভিযোগ দ্রুত নিষ্পত্তি করতে ব্যাংকসমূহ আঞ্চলিক অফিস পর্যায়ে অভিযোগ সেল গঠন করবে।
নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি, শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা, মানবসম্পদ উন্নয়নসহ চাকরিসংক্র্রান্ত নিয়মনীতি প্রণয়ন ও অনুমোদন করবে পর্ষদ। চেয়ারম্যান বা পরিচালক কোনো অবস্থাতেই বিদ্যমান নীতির আলোকে কার্যকর নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি, শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা বিষয়ে কোনোভাবে প্রভাব খাটাতে পারবেন না। বিভিন্ন স্তরে নিয়োগ বা পদোন্নতির ক্ষেত্রে গঠিত মনোনয়ন কমিটিতে পরিচালনা পর্ষদের কোনো সদস্য থাকতে পারবেন না। যদিও প্রধান নির্বাহীর পূর্ববর্তী দুটি ধাপে নিয়োগ ও পদোন্নতি পর্ষদের হাতে থাকবে। তবে এসব নিয়োগ ও পদোন্নতি বিদ্যমান চাকরিনীতি অনুযায়ী অবশ্যই যথাযথভাবে হতে হবে। বার্ষিক বাজেট ও বিধিবদ্ধ আর্থিক বিবরণীসমূহ পর্ষদের অনুমোদনক্রমে চূড়ান্তভাবে প্রস্তুত করতে হবে। এছাড়া পর্ষদ ব্যাংকের আয়-ব্যয়, তারল্য, নন-পারফর্মিং সম্পদ, মূলধন ভিত্তি, মূলধন পর্যাপ্ততা, ঋণ-ক্ষতি প্রভিশন রক্ষা, অনাদায়ী ঋণ আদায়ে আইনি পদক্ষেপসমূহ ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে পর্যালোচনা করবেন।
পর্ষদ ব্যাংকের ক্রয়সংক্রান্ত নীতি ও পদ্ধতি প্রণয়ন করবে এবং ব্যয়ের ক্ষেত্রে প্রধান নির্বাহী ও তার অধীনদের ক্ষমতা বণ্টন করবে। অবকাঠামো উন্নয়ন, ভূমি ক্র্রয়, ইমারত নির্মাণ, যানবাহন ইত্যাদি বিষয়ক কাজ পর্ষদের অনুমোদনসাপেক্ষে হতে হবে। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনক্রমে পর্ষদ ব্যাংকের জন্য একজন দক্ষ প্রধান নির্বাহীর নিয়োগ প্রদান করবেন।
পর্ষদের চেয়ারম্যান ব্যক্তিগতভাবে নীতি প্রণয়ন ও নির্বাহী কর্তৃত্ব প্রয়োগের ক্ষমতা রাখেন না। তিনি ব্যাংকের কোনো প্রশাসনিক বা দৈনন্দিন বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। তবে পর্ষদকে প্রদত্ত দায়িত্বের আলোকে চেয়ারম্যান ব্যাংকের যে কোনো শাখা বা আর্থিক কর্মকাণ্ড পরিদর্শন করতে পারেন। তিনি ব্যাংকের যে কোনো কার্য সম্পর্কে ব্যাখ্যা তলব করতে পারেন এবং এ সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন পর্ষদের/নির্বাহী কমিটির সভায় উপস্থাপন করতে পারেন। পর্ষদের সিদ্ধান্তক্রমে প্রধান নির্বাহীর মাধ্যমে এ বিষয়ে তিনি যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন। তবে প্রধান নির্বাহীর বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তাঁর বক্তব্যসহ অভিযোগ পর্ষদের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাতে হবে। উপদেষ্টা যে কাজের জন্য নিয়োগ পেয়েছেন, পর্ষদ বা প্রধান নির্বাহীকে তিনি সে বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করবেন। কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে বা প্রশাসনিক কোনো বিষয়ে তাঁর কোনো নির্বাহী কর্তৃত্ব থাকবে না।
প্রধান নির্বাহী পর্ষদ কর্তৃক প্রদত্ত কর্তৃত্ব ও ব্যবসায়িক পরিকল্পনা দক্ষতার সঙ্গে বাস্তবায়নের এবং প্রশাসনিক ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা পরিচালনার ক্ষেত্রে দায়বদ্ধ থাকবেন। তিনি ব্যাংক কোম্পানি আইনসহ সকল বিধিবিধান পরিপালনে নিশ্চিত থাকবেন। ব্যাংক কোম্পানি আইনসহ যে কোনো বিধিবিধান লঙ্ঘনের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে তথ্য সরবরাহ করবেন। তাঁর দুই ধাপ নিচের কর্মকর্তা ব্যতীত অন্য সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর নিয়োগ, পদায়ন, শৃঙ্খলা ভঙ্গজনিত শাস্তিবিধান ইত্যাদির দায়িত্ব তাঁর। অনুমোদিত চাকরি নীতি, মানবসম্পদ নীতি ও পর্ষদের অনুমোদনের ভিত্তিতে তিনি এ কাজ সম্পাদন করবেন।
পরিচালনা পর্ষদ মাসে এক বা একাধিকবার সভায় মিলিত হতে পারবেন, তবে অবশ্যই প্রতি তিনমাসে একবার সভা করতেই হবে। নির্বাহী কমিটির সদস্য সাতের বেশি হবে না। পরিচালকদের ব্যাংক সংক্রান্ত আইন, নিয়মনীতি সম্পর্কে সম্যক ধারণার জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকতে হবে। এভাবে কর্পোরেট গভর্নেন্সের মাধ্যমে সুনির্দিষ্টভাবে দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব বণ্টন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণপূর্বক সামগ্রিক ব্যাংকিং খাতের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
সূত্র: বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস
এএ
ব্যাংকার ডেস্ক