ঢাকা, শনিবার, ০৭ জুন ২০২৫

২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ০৯ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

ব্যাংকিং খাতের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ

ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী

প্রকাশ: ২১:২৬, ২ জুন ২০২৫ | আপডেট: ২১:২৬, ২ জুন ২০২৫

ব্যাংকিং খাতের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ

আর্থিক খাত একটি জ্ঞাননির্ভর (knowledge based) খাত। পৃথিবীর মোটামুটিভাবে সব দেশেই আর্থিক খাতের সর্ববৃহৎ অংশ হচ্ছে ব্যাংক ব্যবস্থা। যেমন- বাংলাদেশের কথাই ধরা যাক, এখানে আর্থিক খাতের ৯০ শতাংশেরও বেশি অংশ ব্যাংক ব্যবস্থাধীন। প্রাচীন গ্রিক ব্যাংকিং বা আদি ব্যাংকিং সীমাবদ্ধ ছিল মুদ্রা বিনিময় এবং মুদ্রা জমা ও উত্তোলনের মধ্যে। এখনকার ব্যাংকগুলোকে বলা হয় financial intermediary অর্থাৎ আর্থিক মধ্যস্থতাকারী, আমানতকারী ও ঋণগ্রহীতাদের মধ্যে মধ্যস্থতা করতে গিয়ে ব্যাংকগুলোকে উচ্চমানের শিক্ষা, গবেষণা ও প্রযুক্তির আশ্রয় নিতে হয়।

আর্থিক মধ্যস্থতকারীরা শুধু এক পক্ষের কাছ থেকে ফান্ড সমবেত করে অন্য পক্ষকে প্রদান করে না, এর মাধ্যমে ব্যাংকের liability-i maturity matching, interest rate matching ইত্যাদি নিশ্চিত করতে হয়। মধ্যস্থতার মাধ্যমে ব্যাংক আমানতকারী ও ঋণগ্রহীতা উভয় পক্ষকে ঝুঁকিমুক্ত করে নিজে risk arbitrage-এ নিয়োজিত হয় মুনাফার আশায়। আর্থিক খাতের পরিভাষায় এগুলোই হচ্ছে Financial Engineering।

শুধু জ্ঞাননির্ভর নয়, ব্যাংক বা ব্যাংকিং দিন দিনই হয়ে যাচ্ছে প্রযুক্তিনির্ভর। শিক্ষা ও গবেষণা বিকাশের মাধ্যমে নতুন নতুন ব্যাংকিং প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হচ্ছে। সেগুলো ব্যবহার করে আমরা পেমেন্ট সিস্টেমকে ধীরে ধীরে Real Time-এ উন্নীত করছি। এখন আমরা ঘরে বসে ব্যাংকিং করতে পারি (Home Banking)। ২৪ ঘণ্টাই ব্যাংকিং (24 Hour Banking) করতে পারি। প্রযুক্তির সাহায্যে ব্যাংক ারংরঃ না করেই আমরা যার যার অবস্থান থেকে ব্যাংকিং সেবা পেতে পারি। আর্থিক খাতে প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহারকেই আমরা বলে থাকি Fintech।

২০০৬ সালে জাতিসংঘ প্রণীত আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণ সংক্রান্ত বিখ্যাত ডকুমেন্ট ‘Blue Book’ প্রকাশিত হওয়ার পর উন্নত, উন্নয়নশীল এবং অনুন্নত সব দেশেই ব্যাংকিংয়ের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যাংকিং। যার মূল কথা হচ্ছে যারা ব্যাংকিং সেবার বাইরে অবস্থান করছেন, তাদের কীভাবে টেকসইভাবে ব্যাংকিং সেবার আওতায় নিয়ে আসা যায়। অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে পরিবেশবান্ধব ব্যাংকিং কার্যক্রম যোগ করে, একে কেউ কেউ বলে থাকেন টেকসই ব্যাংকিং/নৈতিক ব্যাংকিং। এ ধরনের মতবাদ চিরাচরিত ব্যাংকিংয়ের ধারণাকে পাল্টে দেয়। ব্যাংকারদের অনেক বেশি মানবিক হওয়ার আহ্বান জানায়। এ ধরনের ব্যাংকিং Fintech-এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়। বরং প্রযুক্তি ব্যবহার করে ব্যাংকিং সেবা সবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে। মনে রাখতে হবে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি শুধু আর্থিক সেবায় অভিগম্যতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে অর্জন করা সম্ভব নয়, তার জন্য আরও প্রয়োজন আর্থিক জ্ঞান ও সচেতনতা। আর্থিক সেবা প্রদানকারী বা ব্যবহারকারী উভয় পক্ষকেই আর্থিক জ্ঞান ও সচেতনতার অধিকারী হতে হবে।

আর একদল গবেষক ও শিক্ষাবিদ আছে, যারা বিশ্বাস করে ‘Banks are special’, আর্থিক খাতের সিংহভাগ ব্যাংকিংয়ের দখলে, সেজন্যই শুধু ব্যাংকাররা স্পেশাল নয়। পেমেন্ট সিস্টেমেরও সর্ববৃহৎ অংশ ব্যাংকিং। তা ছাড়া মুদ্রাব্যবস্থার পুরোটাই (কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অংশ বাদ দিয়ে) ব্যাংকিং। কারণ ব্যাংকাররা মুদ্রার জন্ম দিতে পারে এবং সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শুধু ব্যাংকারদের দায় হচ্ছে money। বিভিন্ন গবেষণায় এটিও প্রমাণিত হয়েছে যে, আর্থিক খাতের প্রধান দুই সমস্যা : বাজার অসম্পূর্ণতা (market imperfection) এবং তথ্যের অসামঞ্জস্যতা (asymmetric information)– এগুলোও ব্যাংকিং খাতই সবচেয়ে ভালো মোকাবিলা করতে পারে। ব্যাংকিং ব্যবস্থার এসব বিশেষ বৈশিষ্ট্যের জন্যই কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে বিশেষভাবে তদারকির ব্যবস্থা করে থাকে, যা স্বাভাবিকভাবেই হবে জ্ঞান-প্রযুক্তি-গবেষণা-উদ্ভাবনসমৃদ্ধ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যকর তদারকি, আর্থিক বা ব্যাংকিং খাতের উত্তরোত্তর উন্নতির অন্যতম নিয়ামক। কার্যকর তদারকি শুধু গতানুগতিক আইন বা নীতিমালা প্রতিপালনে সহায়তা করে না, ব্যাংকিং ঝুঁকিও কমাতে সহায়তা করে। কার্যকরী তদারকি প্রতিষ্ঠান এমন একটি তদারকি পরিবেশ তৈরি করে যেখানে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন নতুন সেবা উদ্ভাবন করার প্রেরণা পায়, নতুন নতুন প্রযুক্তি শিক্ষায় আগ্রহী হয়ে ওঠে। সেজন্য তদারকি প্রতিষ্ঠান বা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে শিক্ষা-প্রযুক্তি-গবেষণার আশ্রয় নিতে হয়। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর যোগ্যতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি এবং তদারকির মান বৃদ্ধিকল্পে সারা বিশ্বেই এখন তদারকি প্রযুক্তির ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে, এটাকেই সংক্ষেপে বলা হয় Regtech।

২০০৭-০৮ সালের বিশ্ব আর্থিক সংকট থেকে আমরা কতগুলো শিক্ষা নিতে পারি। প্রথমত, অন্যান্য বাজার থেকে আর্থিক বাজার ভিন্ন। কারণ আর্থিক বাজার সংকট নিজে থেকেই পরিশুদ্ধ হয় না। প্রতিযোগিতামূলক বাজারের অনুশাসন, বাজারমূল্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে চাহিদা-জোগানের মধ্যে ভারসাম্য সৃষ্টি করবে, তা আর্থিক বাজারের ক্ষেত্রে প্রায়ই প্রযোজ্য নয়। দ্বিতীয়ত, আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ অতিমাত্রায় ঋণনির্ভর (leveraged) এবং পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। সুতরাং আর্থিক সংকটকালীন সময়েই যদি কালক্ষেপণ না করে সমুচিত বহিঃহস্তক্ষেপ না করা হয় তাহলে সে সংকটের বিস্তার ঘটবে অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এবং পরবর্তীকালে যা থেকে real sector-ও সংক্রমিত হয়। প্রত্যেকটি আর্থিক সংকট একে অন্য থেকে ভিন্ন।

জ্ঞান-গবেষণায় সমৃদ্ধ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষেই সম্ভব বিভিন্ন প্রকৃতির আর্থিক সংকট মোকাবিলা করা। বিশ্ব আর্থিক সংকট কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দর্শনের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সনাতন দর্শন-মূল্য স্থিতিশীলতার অতিরিক্ত আর্থিক স্থিতিশীলতায়ও মনোযোগী হতে হবে। মূল্য স্থিতিশীলতা ও আর্থিক স্থিতিশীলতা এগুলো অর্জনের জন্য শুধু সাদামাটা জ্ঞান নয়, উচ্চমার্গের জ্ঞান-গবেষণার প্রয়োজন। আমরা অনেক সময়ই কেন্দ্রীয় ব্যাংক শক্তিশালীকরণের কথা বলি। এটা শুধু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকি শক্তিশালীকরণ নয়, সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকারদের তাত্ত্বিক, প্রায়োগিক জ্ঞানের উন্নয়নও বোঝায়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ ব্যাংকিংয়ে উচ্চশিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরার জন্যই ওপরের ভূমিকা উপস্থাপন করা হয়েছে। এবার আমি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিষয়টি আলোচনা করব। তবে এখানে বলে রাখা ভালো, শিক্ষা বা উচ্চশিক্ষা বলতে শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকে বোঝানো হচ্ছে না, এর সঙ্গে off-the-job প্রশিক্ষণ এমনকি on-the-job প্রশিক্ষণ এবং আর্থিক জ্ঞান (financial literacy)কেও অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

স্বাধীনতার পর পরই বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা জাতীয়করণ করা হয়। ব্যাংকিং ব্যবস্থা পুনর্গঠন তথা সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে ভারতের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের বিশেষজ্ঞ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত করা হয় বিআইবিএম। ১৯৭৪ সালে বিআইবিএম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশে ‘ব্যাংকিং শিক্ষা’র যাত্রা শুরু। বিআইবিএম প্রতিষ্ঠার পর ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় BBTA, অন্যান্য জাতীয়করণকৃত ব্যাংকগুলোর নিজস্ব প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়। প্রথম থেকেই ‘শ্রম বিভাজন’টা ছিল এ রকম : বিআইবিএম মধ্যম এবং উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান করবে আর নিজস্ব প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানসমূহ নিম্নপদস্থ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ চাহিদা পূরণ করবে। প্রথমদিকে ফাউন্ডেশন ট্রেনিং এবং Technical skill development সম্পর্কিত চাহিদার পরিমাণ বিপুল হওয়ার কারণে ৭০ দশকব্যাপী বিআইবিএম-কেও ফাউন্ডেশন ট্রেনিং নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হয়।

বিআইবিএম-এর কার্যক্রমে গতির সঞ্চার হয় ৮০-র দশকের প্রথমদিকে যখন বিআইবিএম মিরপুরে তার নিজস্ব ক্যাম্পাসে স্থানান্তরিত হয়। ৭০-র দশকে ব্যাংক ব্যবস্থাপনা দ্রুত ব্যাংক নেটওয়ার্ক ও সেবার সম্প্রসারণে অনেক বেশি নজর দিয়েছিল। কিন্তু একই সঙ্গে উপেক্ষিত ছিল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সেবার মান ও অপারেশনাল দক্ষতা বৃদ্ধির বিষয়টি। সে সময় ব্যাপকভাবে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, যাদের কখনও স্বল্প প্রশিক্ষণ বা কখনও বিনা প্রশিক্ষণেই কাজ শুরু করতে হয়েছিল। ব্যাংক ব্যবস্থার দক্ষতা বৃদ্ধি ও প্রতিযোগিতামূলক করার লক্ষ্য নিয়ে ৮০-র দশকের প্রথমদিকে নতুন বেসরকারি ব্যাংকের লাইসেন্স প্রদান শুরু হয় এবং ২টি জাতীয়করণকৃত ব্যাংকও বেসরকারিকরণ করা হয়। ফলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে গ্রাহক সেবার মানের কিছুটা উন্নতি হলেও সার্বিক দক্ষতা ও মানবসম্পদের গুণগত মানের উন্নয়ন হয়নি।

নব্বই দশকের প্রথমদিকেই ব্যাংকিং সেক্টরের দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে উঠে সার্বিক ব্যাংকিং দক্ষতা বৃদ্ধিকল্পে বিশ্বব্যাংকের Financial Sector Adjustment Credit (FSAC) প্রদান করা হয় বাংলাদেশ সরকারকে। ঋঝঅঈ-র আওতায় একই সময় USAID কারিগরি সহায়তা (TA) হিসাবে Financial Sector Reform Project (FSRP) নামে আর একটি অনুদান প্রদান করে। অন্যান্য উদ্দেশ্যের মধ্যে BIBM, BBTA, এবং NCB-গুলোর প্রশিক্ষণ দক্ষতা বৃদ্ধিকরণ ছিল FSRP-র অন্যতম লক্ষ্য। FSRP বাংলাদেশের ব্যাংকিং শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মানোন্নয়নে দুটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা ডকুমেন্ট প্রণয়ন করেছিল। প্রথমটি ছিল : Medium Term Bank Training Strategy এবং দ্বিতীয়টি ছিল : Bank Supervision Training Program. Medium Term Strategy-র মূল লক্ষ্য ছিল : বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসমূহের অপারেশনাল এং আর্থিক performance উন্নীত করা।

Medium Term Strategy-র উপাদানগুলো ছিল : i) BB Overseas Advanced Training Program, ii) MBM Degree Program at BIBM, iii) Mid-Career Banking Course at BIBM, iv) BIBM Development, v) BBTA Development, vi) NCB Training Institute Development, vii) Overseas Training/Regional Study Tour and viii) Computer Training at BIBM| Strategy Paper বাংলাদেশ সরকার সার্বিকভাবে গ্রহণ করেছিল মর্মে আমরা শুনেছিলাম। কিন্তু পরবর্তীকালে এর বাস্তবায়ন আমাদের ব্যথিত করেছে। MBM Degree Program শুরু হয়ের্ছিল বিআইবিএম-এর নিজস্ব আগ্রহে। Mid-Career Banking Course, Overseas Training/Regional Study Tour ইত্যাদি ব্যাংকিং সেক্টরের গুণগত মানোন্নয়নে বিরাট অবদান রাখতে পারত কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, সেগুলো বাস্তবায়ন শুরুর পর্যায়েই বন্ধ হয়ে যায়।

Bank Supervision Training Program-টি তৈরি করা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের Federal Deposit Insurance Corporation (FDIC)-এর ট্রেনিং প্রোগ্রামের আলোকে নিম্ন, মধ্যম ও উচ্চপর্যায়ের Bank examiner-দের জন্য। উদ্দেশ্য ছিল Bank examination প্রক্রিয়াকে উন্নত ও কার্যকর করা। এখানে আরও উল্লেখ করা প্রয়োজন, প্রায় একই সময়ে ADB ‘Human Resource Development and Technological Upgradation of BB’ শীর্ষক আর একটি গবেষণাপত্র তৈরি করেছিল। যেখানে উল্লেখ ছিল, বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের দক্ষতার অভাবের জন্যই তাদের তদারকি ক্ষমতা দুর্বল। বিশেষ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকারদের মধ্যে সামষ্টিক অর্থনীতিসংক্রান্ত জ্ঞানের অভাব রয়েছে। সেজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকারদের জন্য দেশীয় ও বিদেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ প্রদান করা উচিত।

নব্বই দশকের ঋঝজচ লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হলেও বাজারমুখী আর্থিক ও ব্যাংকিং ব্যবস্থা প্রচলনের জন্য যে ধরনের শিক্ষা-প্রশিক্ষণ প্রয়োজন তা সম্ভবত সংশ্লিষ্ট সবাইকে উপলব্ধি করাতে সক্ষম হয়েছিল। ৯০ দশক ও তার পরবর্তীতে আরও অনেক নতুন PCB-কে লাইসেন্স প্রদান করা হয়। এ মুহূর্তে BIBM ও BBTA ছাড়াও প্রায় প্রত্যেকটি ব্যাংকেরই নিজস্ব প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। নিজস্ব প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলো ফাউন্ডেশন প্রোগ্রাম ছাড়াও বিষয়ভিত্তিক ও ICT-র ওপর প্রশিক্ষণের আয়োজন করে থাকে। ফাউন্ডেশন প্রোগ্রাম ব্যাংকিং দক্ষতা (skill) অর্জন ও বৃদ্ধিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। কিন্তু আমাদের দেশের ৬১টি ব্যাংকের ৬১ ধরনের ফাউন্ডেশন প্রোগ্রাম। কোনোটি সাত কর্মদিবসব্যাপী, কোনোটি এক মাসব্যাপী, আবার কোনোটি এক মাসেরও অধিক। ট্রেনিং content, reading material ইত্যাদি বিষয়েও uniformity বা standard practice দেখা যায় না। সব ব্যাংকের জন্য একটি uniform এবং যুগোপযোগী Foundation Program প্রণয়ন ও অন্যান্য বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচিগুলোর মান নির্ধারণ ও বজায় রাখার জন্য একটি accreditation council প্রতিষ্ঠার কথা বিবেচনা করা যেতে পারে। বাংলাদেশে ব্যাংকিং প্রশিক্ষণের ধারণাটি সম্পূর্ণরূপে on-the-job প্রশিক্ষণ পদ্ধতিনির্ভর, on-the-job প্রশিক্ষণ (যেমন : mentoring, coaching, informal group discussion etc.) বাংলাদেশে পুরোপুরি উপেক্ষিত। Hard Skill বা technical competency বাড়ানোর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকলেও soft-skill সংক্রান্ত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা অপ্রতুল।

FSRP কর্তৃক সুপারিশকৃত MBM প্রোগ্রাম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি নিয়ে বিআইবিএম শুরু করে ১৯৯৭ সালে। প্রথম থেকেই বিআইবিএম-এর ইচ্ছা ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি নেওয়া। ২-৩ বার সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর ২০১২ সালে MBM প্রোগ্রামটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি লাভ করে। এ পর্যন্ত প্রায় এক হাজারের অধিক গ্রাজুয়েট এমবিএম ডিগ্রিপ্রাপ্ত হয়েছে। প্রথমদিকে এমবিএম প্রোগ্রামটি সংশ্লিষ্ট সবার কাছে সমাদৃত ছিল। বিআইডিএস-এর মূল্যায়নে দেখা গেছে, এমবিএম প্রোগ্রামটি পরিবর্তনশীল ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। প্রায় সব এমবিএম গ্রাজুয়েটই মনে করে এমবিএম প্রোগ্রাম তাদের কর্মজীবনে অনুকূল প্রভাব ফেলছে। ‘যারা ব্যাংকিং career করতে চায় তাদের জন্য এমবিএম একটি আদর্শ শিক্ষা কর্মসূচি’- বিআইডিএস-এর গবেষণায় উদ্ধৃত এ মতামত দিয়েছে প্রায় ৯৮ শতাংশ এমবিএম গ্রাজুয়েটস। বিআইবিএম-পরিচালিত এমবিএম-এর কার্যকারিতা বৃদ্ধির আরও সুযোগ আছে বিধায় এমবিএম-এর শিক্ষার পরিবেশ উন্নতকরণ, শিক্ষাদক্ষতা বৃদ্ধি, মূল্যায়ন পদ্ধতির পবির্তন ইত্যাদি বিষয়ে বিআইডিএস বেশ কিছু সুপারিশ প্রদান করেছিল।

শিক্ষা কার্যক্রম (MBM) ছাড়াও বিআইবিএম-এর প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে ব্যাপক পরিবর্তন আনয়ন করা হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুপ্রেরণা ও নির্দেশনায়। গতানুগতিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের বেড়াজাল অতিক্রম করে ২০১০ সাল থেকে বিআইবিএম মধ্যম ও উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের জন্য বিভিন্ন ধরনের সময়োপযোগী গবেষণাধর্মী প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য : Sectoral Review Workshop (যার আওতায় প্রতিবছর ব্যাংক ব্যবস্থার ৭টি functional area ওপর গবেষণা করা হয় এবং পরবর্তীতে গবেষণার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয় সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে), Research Workshop (যেখানে গুরুত্বপূর্ণ প্রায়োগিক বিষয়ের ওপর প্রথমে গবেষণা করা হয় এবং ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে পরবর্তীকালে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়)। Practiotioner-Academia-এর মধ্যে interaction বৃদ্ধিকল্পে Annual Banking Conference (ABC) অনুষ্ঠিত হয়।

পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের মধ্যে ব্যাংকিং রহঃবৎধপঃরড়হ বৃদ্ধিকল্পে Regional Banking Conference (RBC) অনুষ্ঠিত হয়। বিদেশি খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে এবং এককভাবে বিভিন্ন ধরনের certification program আয়োজন করা হয়। বিআইডিএস-এর মূল্যায়ন রিপোর্টের সুপারিশের আলোকে ঢাকার বাইরের বহুসংখ্যক ব্যাংক কর্মকর্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য এসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া একই উদ্দেশ্যে বিআইবিএম outreach (on the spot) training, workshop এবং E-Workshop আয়োজন করে থাকে। মধ্যম ও উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের চাহিদার কথা মনে রেখে বিআইবিএম ২০১০ সাল থেকে সমসাময়িক ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাংকিং বিষয়ের ওপর প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক Roundtable discussion এবং সেমিনার আয়োজন করে আসছে।

নতুন নতুন ব্যাংকিং প্রশিক্ষণ এবং শিক্ষা কার্যক্রম উপযুক্ত ব্যাংকিং শিক্ষা পরিবেশ তৈরি করতে সক্ষম হলেও সম্ভবত বিআইবিএম এখন সেই ধারা ধরে রাখতে পারছে না বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। প্রথমদিকে এমবিএম প্রোগ্রামের যে সুনাম ছিল, এমবিএম গ্রাজুয়েটদের যে ধরনের চাহিদা ছিল, সে রকমটি এখন আর দেখা যাচ্ছে না। নিয়োগকর্তারা এখন আর এমবিএম গ্রাজুয়েট চায় না, তাদের মতামত এমবিএম ডিগ্রিধারীরা আশানুরূপ দক্ষতা দেখাতে পারছে না। এমবিএম-এ ভর্তি আগ্রহী ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যহারে কমে গিয়েছে। প্রশিক্ষণের মান সম্বন্ধেও প্রশিক্ষণ গ্রহণকারীরা আজকাল বিরূপ মন্তব্য করে। প্রশিক্ষণের মান উন্নয়নে বিআইবিএম-এ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রাক্তন গভর্নর, ডেপুটি গভর্নর, নির্বাহী পরিচালক পদমর্যাদার বেশ কয়েকজনকে নিয়োগ দেওয়ার পরও প্রশিক্ষণ দক্ষতা বাড়ছে না। এগুলো কেন হচ্ছে? এ রকম তো হওয়ার কথা ছিল না। বিআইবএম-এর শেষ বহিঃমূল্যায়ন হয়েছিল ২০১৩ সালে। বিআইডিএস মূল্যায়নটি করেছিল। এখন ২০২৫ সাল। দীর্ঘ ১২ বছর বা ১ যুগ পর আর একটি বহিঃমূল্যায়ন বিআইবিএম-এর জন্য অতি প্রয়োজন। শুধু বিআইবিএম প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নয়; বিআইবিএম-এর প্রতিটি প্রশিক্ষণ কোর্স, এমবিএম প্রোগ্রাম ইত্যাদির সুচারুভাবে এবং সততার সঙ্গে মূল্যায়ন করা উচিত।

পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধিকল্পে প্রাতিষ্ঠানিক উচ্চশিক্ষা প্রদান করে আসছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কমার্স/বিজনেস ফ্যাকাল্টি এবং ঢাকা, রাজশাহী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে প্রতিষ্ঠিত IBA-সমূহ। বিআইবিএম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি নিয়ে এমবিএম প্রোগ্রাম চালু করার কয়েক বছর আগে থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগ মাস্টার্স লেভেলে ব্যাংকিং major offer করত, ২০০৪ সালে ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স নামক আর একটি স্বতন্ত্র বিভাগ স্থাপন করা হয়। বিজনেস ফ্যাকাল্টির অধীনে তখন থেকেই ব্যাংকিং-এ বিবিএ, এমবিএ এবং ইভিনিং এমবিএ ডিগ্রি প্রদান করা হচ্ছে।

সম্প্রতি মূলত ব্যাংকিং পেশাজীবীদের চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং ও ইন্স্যুরেন্স বিভাগ মাস্টার্স ইন প্রফেশনাল ব্যাংকিং (MPB) চালু করে। এমপিবির সিলেবাস ও শিক্ষা পদ্ধতি সাধারণ এমবিএ ও ইএমবিএ থেকে ভিন্ন এবং পরিবর্তনশীল ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে সংগতি রেখে প্রতিনিয়ত এগুলো পরিবর্তিত হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও বিবিএ ও এমবিএ ডিগ্রি প্রদান করছে। নব্বই দশকের প্রথমার্ধ থেকেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কার্যক্রম শুরু করে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মূলত বিজনেজ স্কুলকেন্দ্রিক। তাদের মূলধারার কর্মকাণ্ডই হচ্ছে বিজনেজ ডিগ্রি প্রদান করা। পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস ফ্যাকাল্টি এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ-সমূহ সরাসরি ব্যাংকিং ডিগ্রি প্রদান না করলেও তাদের বিবিএ, এমবিএ ডিগ্রিধারীদের ব্যবসা পরিচালনার knowledge base তৈরি করার ক্ষেত্রে ব্যাপক অবদান রাখছে।

জ্ঞানভিত্তিক সুপ্রতিষ্ঠিত হলেই পরবর্তীতে ব্যবসার যে কোনো ক্ষেত্রেই পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি সম্ভব হবে। বিআইবিএম-এর এমবিএম ডিগ্রি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং ও ইন্স্যুরেন্সে বিভাগের প্রফেশনাল ডিগ্রিসহ অন্যান্য ডিগ্রি প্রোগ্রামের সিলেবাস ও শিক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তনশীল ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। বিআইবিএম-এর এমবিএম প্রোগ্রাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়ার ফলে ব্যাংকিং সংক্রান্ত সব ডিগ্রি প্রোগ্রামগুলোর মধ্যে সমন্বয় করাটা খুব সহজ হয়েছে। সারা বিশ্বে লন্ডন ইনস্টিটিউট অব ব্যাংকিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স প্রদত্ত ব্যাংকিং প্রোগ্রামগুলোকেই benchmark/ideal হিসেবে গণ্য করা হয়। লন্ডন স্কুলে আন্ডার গ্রাজুয়েট ও পোস্ট গ্রাজুয়েট প্রোগ্রামের সিলেবাসের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং ডিগ্রি এবং বিআইবিএম-এর এমবিএম ডিগ্রির সিলেবাসের তুলনামূলক বিচার করলে দেখা যাবে আমরা মোটামুটি সম-অবস্থানেই অবস্থান করছি। তবে লন্ডন স্কুলের মতো আমাদের প্রোগ্রামগুলো আরও বেশি ‘hands-on’ করতে হবে। আমাদের industry–academia যোগাযোগ ও সম্পর্ক আরও বাড়াতে হবে। লন্ডন স্কুলের ডিগ্রিধারীরা নির্ধারিত ব্যাংকিং অভিজ্ঞতা থাকা সাপেক্ষে লন্ডন ইনস্টিটিউটের চার্টার্ড অ্যাসোসিয়েটশিপ পেয়ে থাকেন। সে ধরনের ব্যবস্থা আমাদের দেশেও করা উচিত, তাহলে অনেকেই ব্যাংকিং ডিগ্রি অর্জনে উৎসাহিত হবে।

সবশেষে আমি ব্যাংকিং খাতের ভবিষ্যৎ নিয়ে দু-একটি কথা বলব। শুধু ব্যাংকিং শিক্ষাই ব্যাংকিং খাতকে নিরাপদ, শক্তিশালী, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও উন্নয়নমুখী করতে পারবে না। আমরা ব্যাংকিং শিক্ষা-প্রশিক্ষণে যথেষ্ট উন্নতি করেছি, কিন্তু সে অনুপাতে সার্বিক ব্যাংকিং উন্নয়ন লক্ষ করছি না। আমার মতে, এ মুহূর্তে ব্যাংকিং খাতের সবচেয়ে দুর্বল দিক ‘সুশাসনের অভাব’, ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ সুশাসন বাড়ানোর জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের দক্ষতা ও নৈতিকতার উন্নয়ন। এর সঙ্গে আবারও ব্যাংকিং শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের সরাসরি যোগসূত্র রয়েছে। অন্যদিকে ব্যাংকগুলোর বহিঃস্থ সুশাসন বাড়ানোর জন্য প্রয়োজন কেন্দ্রীয় ব্যাংককে শক্তিশালী করা ও ক্ষমতায়ন করা। অভ্যন্তরীণ ও বহিঃস্থ সুশাসনের উন্নয়ন এবং সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষা-প্রশিক্ষণের উন্নয়নের মাধ্যমে ব্যাংকারদের দক্ষতা উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় আমরা সক্ষম হব আগামী দিনের অভীষ্ট ব্যাংকিং লক্ষ্য অর্জনে।

সুপারিশসমূহ

ব্যাংকিং শিক্ষা বা উচ্চশিক্ষাকে এককভাবে নয়, সামগ্রিকভাবে চিন্তা করতে হবে। শিক্ষা, গবেষণা, প্রশিক্ষণ- on the job এবং off the job – soft skill এবং hard skill – financial literacy campaign – সবগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধনের প্রযোজন।

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মাধ্যমে knowledge base তৈরি সম্ভব হলেও, operational skill অর্জনের প্রথম ধাপ foundation training। উন্নতমানের, যুগোপযোগী, uniform foundation training এবং বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক (যেমন : credit, trade services, AML, risk management ইত্যাদি) প্রশিক্ষণের মানোন্নয়নের জন্য দরকার accreditation council স্থাপন করা।

শিক্ষা প্রশিক্ষণ শুধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নয়, ব্যাংক পর্ষদের সদস্যদের জন্যও অতি প্রয়োজন। ব্যাংকিং দক্ষতা বৃদ্ধিকল্পে টপ ম্যানেজমেন্টের একান্তিক আগ্রহ ও সদিচ্ছা অত্যন্ত জরুরি।

ব্যাংকিং প্রশিক্ষণের মধ্যে on the job প্রশিক্ষণ (যা ব্যাপকভাবে উপেক্ষিত), উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের জন্য soft skill training, leadership training ইত্যাদির আয়োজন করতে হবে।

শিক্ষা-প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামসমূহ আরও কর্মমুখী, বাস্তবানুগ ও ‘hands-on’ করতে হবে। সর্বোপরি Industry–Academia পারস্পরিক সম্পর্ক ও যোগাযোগ অনেক বাড়াতে হবে।

বিআইবিএমসহ প্রত্যেকটি ব্যাংকিং র্শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৪-৫ বছর পরপর external evaluation হওয়া প্রয়োজন। তা ছাড়া প্রতিটি কোর্স শেষেও সামগ্রিক evaluation হওয়া উচিত।

প্রত্যেক ব্যাংকে congenial learning environment নিশ্চিত করা উচিত। সে লক্ষ্যে সব ব্যাংকে Chief Learning Officer (CLO) নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে।

ব্যাংকিং ও ইন্স্যুরেন্সসহ বিজনেস ফ্যাকাল্টির অন্যান্য বিভাগ, আইবিএ, বিআইবিএম­ বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক on-line বা off-line, এককভাবে বা দেশীয় খ্যাতনামা বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে certificate course চালু করতে পারে।

অন্যান্য উন্নত ও পার্শ্ববর্তী দেশের মতো বাংলাদেশেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং ব্যাংকিং অ্যাসোসিয়েশনকে (ABB) ব্যাংকিং জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন ও বৃদ্ধিকল্পে ঢ়ৎড়-ধপঃরাব ভূমিকা পালন করতে হবে।

উন্নত দেশের মতো বাংলাদেশেও উচ্চতর ব্যাংকিং ডিগ্রিধারী পেশাজীবীদের চার্টার্ড অ্যাসোসিয়েটশিপ প্রদান করা যেতে পারে।

লেখক : প্রাক্তন মহাপরিচালক, বিআইবিএম

(দৈনিক আমাদের সময়-এর সৌজন্যে)

ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী

আরও পড়ুন